ম্যাচ খেলতে নামার আগেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম জানিয়েছিলেন, পুরনো রেকর্ড নিয়ে তিনি খুব একটা মাথা ঘামাতে চান না। তিনি সামনের দিকে তাকাতে চান এবং ভারতকে হারানোর ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তাঁর দল। অবশেষে রবিবাসরীয় রাতে কথা রাখলেন বাবর। বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের ব্যবধান ১৩-০ হল না। আজ ১০ উইকেটে হেরে গেল ভারতীয় ক্রিকেট দল।
আজকের ম্যাচে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন কেন তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয়। সতীর্থ ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্রমশ উর্ধ্বমুখী করতে শুরু করেন। সত্যি কথা বলতে কী, এই দুই ব্যাটসম্য়ানের সামনে ভারতীয় বোলারদের দেখে মনে হচ্ছিল স্লো মিডিয়াম পেসার। একেবারে নির্বিষ গতিতে তাঁরা প্রত্যেকটা বল করে গেলেন। ১২.৪ ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর বলে সটান ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন।
পিছিয়ে ছিলেন না মহম্মদ রিজওয়ানও। ১৪.২ ওভারে জসপ্রীত বুমরাহকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি নিজের অর্ধশতরান করলেন। দুজনেই ৪১ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন। এরপর আর ভারতের কাছে খুব বেশি কিছু একটা করার ছিল না। ফলাফল যা হওয়ার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম। শুরুতেই তিনি স্পষ্ট করে দেন, পরের দিকে মাঠে প্রচন্ড পরিমাণে শিশির পড়বে। সেটাই ম্যাচের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এমনকী, বিরাট কোহলিও স্পষ্ট করে দেন যে তিনিও প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন। যাইহোক এই পরিস্থিতিতেই শুরু হয় খেলা।
আজ ইনিংসের শুরুতে খুব একটা ভালো ফর্মে দেখতে পাওয়া যায়নি ভারতের টপ অর্ডারকে। সৌজন্যে শাহিন আফ্রিদি। তাঁর আগুন গতির সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না ভারতীয় ক্রিকেট দলের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং কেএল রাহুল। ০.৪ ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলে LBW আউট হয়ে ফিরে গেলেন রোহিত শর্মা। তিনি তো রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। অনুশীলন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করেছিলেন রোহিত।
কিন্তু, আজ কাজের কাজটি তিনি করতে পারলেন না। প্রত্যাশা ছিল রোহিত শর্মার উপরেও। ২.১ ওভারে তিনিও শাহিন আফ্রিদির বলে বোল্ড। তিনি ৮ বলে ৩ রান করলেন। এরপর যে পাকিস্তানের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল, তা চোখ বন্ধ করে বলা যেতেই পারে। বলটির বিশ্লেষনে যদি আমরা যাই, ১৪১ কিলোমিটার গতিবেগে বলের লাইনে যেতে পারলেন না রাহুল। শাহিনের ডেলিভারি মাটিতে পড়ার পর কিছুটা হলেও ভিতরের দিকে আসে। রাহুল ভেবেছিলেন বলটা হয়ত বাইরের দিকে বেরোবে। কিন্তু, সেটা হয়নি। ফলস্বরূপ ছিটকে গেল উইকেট।
রাহুল ফেরার পর কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন সূর্যকুমার যাদব। অমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি একটি করে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। ৫.৪ ওভারে হাসান আলির বলে উইকেটকিপার মহম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন সূর্যকুমার যাদব। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ একটা ক্যাচ নিলেন রিজওয়ান। সূর্য ৮ বলে ১১ রান করলেন। সূর্যের ছেড়ে যাওয়া জায়গায় ব্যাট করতে নামেন ঋষভ পান্থ।
তিনি আসার পরেই ভারতের রান রকেটের গতিতে উর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। তিনি এক হাতে হাসান আলিকে পরপর ছক্কা হাঁকিয়ে টিম ইন্ডিয়ার রানের গ্রাফ অনেকটাই উপরের দিকে তুলে দেন। কিন্তু পাকিস্তানের লেগ স্পিনার শাদাব খানের ভেলকি ধরতে পারলেন না তিনি। ১২.২ ওভারে শাদাব খানের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হলেন ঋষভ পান্থ। ব্যাাটের কানায় লেগে বল সোজা আকাশে উঠে যায়। ক্যাচ নিতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি। ঋষভ ৩০ বলে ৩৯ রান করলেন। দুটো করে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি।
তবে এই ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যেও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হলেন বিরাট কোহলি। ১৭.১ ওভারে হাসান আলির বলে ডাবলস নিয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ৪৫ বলে এই অর্ধশতরান পূরণ করেন। আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারতীয় ক্রিকেট দল সাত উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তোলে। আজ ভারতকে ৫৭ রানের ইনিংস উপহার দেন বিরাট কোহলি।
Be the first to comment