রোজদিন ডেস্ক :- ইন্ডিয়া জোটের চাবি কংগ্রেসের হাত থেকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে রাজনীতিতে চর্চা। এরই মাঝে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই নিয়েই মমতাকে কটাক্ষ করে লম্বা চওড়া পোষ্ট করলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার।
শুভঙ্কর তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীজি এক সাক্ষাৎকারে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে, তিনি ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিতে চান। যেকোনো জোটের অংশীদার তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে এবং ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিতে চাইলেও তা গ্রহণযোগ্য। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যক্রম বারবার বিজেপির স্বার্থে কাজ করেছে এবং বিরোধী ঐক্যকে বিপদে ফেলেছে, বিশেষত যখন বিজেপি সংকটে ছিল। যখন বিজেপি সাংবিধানিক লঙ্ঘন, আদানি দুর্নীতি এবং নির্বাচন কৌশল নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম, তখন নেতৃত্ব দাবি করা শুধুমাত্র বিভাজনমূলক একটি কৌশল যা বিজেপির সুবিধা বৃদ্ধি করবে।”
এদিন তিনি সবাইকে মনে করিয়ে লেখেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রথম থেকেই বিজেপির অগণতান্ত্রিক, সংহতি-বিরোধী, এবং ধর্মীয় বিভাজনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। এদিনের পোষ্টে তিনি রাহুল গান্ধীর দুটি জনসংযোগ যাত্রার কথায় উল্লেখ করেন।
এরপরই তিনি বিজেপির ৪০০ পার নিয়ে কটাক্ষ করে লেখেন, চব্বিশ সালে বিজেপির ৪০০টি লোকসভা আসন অর্জনের স্বপ্ন ভেঙে যায় এবং তাদের সমস্ত শরিকদের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য করে।
এদিন তিনি আরও লেখেন, “২০২৪ সালের ভোটে মানুষ কংগ্রেসের উপর আস্থা রেখেছিল। মানুষ রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দলনেতা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তিনি সমস্ত ভারতবাসীর কথাকে পৌঁছে দিচ্ছেন সংসদে।’ এরপরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে কীভাবে নানা ইস্যুতে সুর চড়াচ্ছেন সেইসব কথা।
এদিন শুভঙ্কর তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে লেখেন, “তৃণমূল শুধুমাত্র প্রতি পাঁচ বছর পরপর বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখোমুখি হয়, কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিদিন প্রতিটি বুথ, ব্লক, জেলা, রাজ্য এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে। নির্বাচন নয়, আমাদের বিজেপির বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটি আদর্শগত সংগ্রাম, কারণ তাদের রাজনীতি ভারতের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজবাদী আদর্শের বিরোধী। তৃণমূল বহু ইস্যুতে নীরব থাকে। উপরাষ্ট্রপতি ভোটের সময় তৃণমূল বিরত থাকল।ভোটের আগে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে জগদীপ ধনখড় ও হিমন্ত বিশ্বশর্মার মিটিংও হয়েছিল।”
শুভঙ্কর লিখেছেন, ‘তৃণমূল গোয়া, উত্তরপূর্বে টাকা দিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি তৃণমূল। বাংলাতেই সীমাবদ্ধ তৃণমূল। তৃণমূল কখনও একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চায় না। এদিনের লেখায় শুভঙ্কর তৃণমূলকে একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী দল বলেও অভিহিত করেন। তিনি ২০২৩ সালে তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা চলে যাওয়া নিয়েও লেখেন। এদিন তিনি এও লেখেন, কংগ্রেসের ভোট কেটে তৃণমূল বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছে।
গোটা দেশ ইভিএম,আদানি সেবি, কাস্ট সেনসাস নিয়ে বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সেই সমস্ত বিষয়গুলি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বে খাড়গেজি এবং রাহুল গান্ধীজি’র দ্বারাই সামনে আনা হয়েছে।
শেষের দিকে শুভঙ্কর তাঁর পোষ্টে আবেদন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে যে, শুধুমাত্র রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান, আর্থিক অবস্থা, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষি ভিত্তিক শিল্পের সংকোচন, রাজ্য থেকে কোম্পানি ও শিল্পের চলে যাওয়া যে কারণে সন্ত্রাসবাদ এবং দুর্নীতির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এসব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করুন। আরজি কর হাসপাতালে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা দেশের পুরো জনগণকে হতবাক করেছে, যা সরকারী হাসপাতালগুলোতে মাফিয়া রাজের কুকীর্তি প্রকাশ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের এবং মন্ত্রীদের জেলে বসে থাকা একাধিক দুর্নীতির স্ক্যাম উদ্বেগজনক, শিল্প এবং কোম্পানির চলে যাওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক তথ্য কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, গঙ্গার ক্ষয়প্রাপ্তি বেশ কিছু জেলার উপর প্রভাব ফেলেছে, অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণ ও বিক্রির ঘটনা ঘটছে, আইন শৃঙ্খলা বিপদে পড়েছে, শহরে হত্যার চেষ্টা – তালিকা একেবারে দীর্ঘ। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভালো শাসন প্রয়োজন এবং হারাতে থাকা দুর্গকে রক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট ভাগের হ্রাসও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রাজ্যে বিজেপির উত্থান অব্যাহত। এটা অত্যন্ত জরুরি যে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তি একত্রিত হয়ে বিজেপির স্বৈরাচারী ও ধর্মীয় বিভাজনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
Be the first to comment