কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড কলকাতা। তার মধ্যেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে। ঝড়ের মাঝেই রোয়িং করতে গিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে তলিয়ে গেল দুই কিশোর। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুজির পরও তাঁদের কোনও হদিশ পায়নি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ওই দুই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয় সরোবরের লেক থেকেই। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
জানা গিয়েছে, শনিবার রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করতে নেমেছিলেন চার কিশোর। ঝড়ের সময় রোয়িং বোটে থাকা চারজনের মধ্যে দু’জন তলিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে একজন সাউথ পয়েন্টের ছাত্র। অপর মৃত পড়ুয়া এক পুলিশকর্তার ছেলে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়েই পৌঁছণ রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, প্রতিদিনের মতো এদিনও রবীন্দ্র সরোবরে চলছিল রোয়িং ক্লাবের প্রশিক্ষণ। কিন্তু, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঝড়ের মাঝে পড়ে যায় রোয়িং বোটটি। দমকা বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হওয়ার জেরে উলটে যায় রোয়িং বোটটি। জানা গিয়েছে, যে অঞ্চলে রোয়িং বোলটি উলটে যায়, সেখানে জলের গভীরতা ছিল প্রায় ২০ ফুট। দুর্ঘটনার পর দু’জন রবীন্দ্র সরোবরে তলিয়ে যায়। কিন্তু, বাকি দু’জন কোমওমতে সাঁতরে পাড়ে পৌঁছতে সক্ষম হন। পাড়ে ফিরেই দু’জন গোটা ঘটনার কথা স্থানীয়দের জানান। এরপর তাঁরাই খবর দেন পুলিশে।
স্কুল পর্যায়ের রোয়িং প্রতিযোগিতার ফাইনাল রবিবার রবীন্দ্র সরোবরেই হওয়ার কথা। বস্তুত সেই কারণে বেঙ্গল রোয়িং ক্লাব, লেক ক্লাব, ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের ৫টি বোট শনিবার বিকেল থেকে সরোবরে নামানো হয়েছিল। প্রতিটি বোটে ৫ জন করে স্কুল ছাত্র অনুশীলন করছিল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আচমকাই কালবৈশাখীর ঝড় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে। আর সেই ঝড় সামলাতে না পেরে ৫টি বোটই উলটে যায়। কিন্তু সকলেই সাঁতরে উপরে উঠে এলেও দীর্ঘক্ষণ জলে নিখোঁজ ছিল ওই দুই ছাত্র- পূষণ সাধুখাঁ এবং সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়। দুজনেরই বয়স ১৪ বছর।
খবর পেয়ে রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ, দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং ডুবুরি নামানো হয়। সন্ধে সাড়ে সাতটার কিছু পরে দুই কিশোরের নিথর দেহ জল থেকে উদ্ধার করেন দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে প্রবল কালবৈশাখীর তাণ্ডবের বলি হয়েছেন দুই রাজ্যবাসী। কলকাতায় ঝড়বৃষ্টির জেরে কলেজ স্ট্রিট এলাকায় গাছ ভেঙে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে, বর্ধমানেও গাছ ভেঙে এক ১৪ বছরের বালকের মৃত্যু হয়েছে। ভাতারে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এছাড়া শ্রীরামপুরেও একজনের প্রাণহানি হয়েছে।
শনিবার দুপুরের পর থেকেই কলকাতা জুড়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে চলে বজ্রপাত। তুমুল বৃষ্টির জেরে কলকাতার একাধিক এলাকা ইতিমধ্যেই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের একাধিক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে বলে খবর। দেশপ্রিয় পার্ক, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, লেক মার্কেট এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। জল জমে গিয়েছে বেহালা, শিলপাড়া, গড়িয়াহাট সহ একাধিক এলাকায়। জলমগ্ন হয়েছে উত্তর কলকাতায় আর্মহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালিহাড়ি অঞ্চল। প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোড, লর্ড সিনহা রোড থেকে শুরু করে আলিপুর, বেহালা তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। প্রবল ঝড়ে দৃশ্যমাণতা ক্ষীণ হওয়ায় গাড়ি যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। টালিগঞ্জ-গড়িয়া মেট্রো পরিষেবাও কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়। অফিস ফেরত যাত্রীদের তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তায় আটকে পড়েন।
Be the first to comment