রেলের যাত্রী সুরক্ষা ঠেকেছে তলানিতে, ভাবলেই শিউরে উঠি

Spread the love

সোমা মুখার্জি : আচ্ছে দিনের কথা বলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বা তাঁর ক্যাবিনেটের অন্য মন্ত্রীদের গালভরা কথা যে কতটা শূন্য তার প্রমাণ নোট বন্দি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি। তাঁদের ব্যর্থতার আর একটা নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ভারতবর্ষের লাইফ লাইন বলে যাকে বলা হয়, তা হলো ইন্ডিয়ান রেল। আমি বাঙালি হলেও কর্মসূত্রে বিহারে বসবাস করি। কিছুদিন আগে উপাসনা এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে পাটনা যাওয়ার সময় স্তম্ভিত হয়ে যাই দেখে যে, বেডরোল রাখা হয়েছে টয়লেটে। বিছানার চাদর, কম্বল, বালিশ স্থান পেয়েছে কমোডের উপর। সেইগুলিই দিয়ে দেওয়া হয় যাত্রী সাধারণকে। এত বড়ো নক্কারজনক ঘটনা আর কি হতে পারে? ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষার মান কত নীচে নেমে গেছে তা গতকাল দানাপুর এক্সপ্রেসে রাজেন্দ্রনগর থেকে হাওড়া আসার সময় টের পেলাম। ঘটনাটি ঘটে আমারই কামরায়, আমার বেডের পাশের বেডে। সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরছি আপনাদের সামনে।

দানাপুর এক্সপ্রেস বর্তমানে রাজেন্দ্রনগর-হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে রাতে চুরি হয়ে গেল এক শিক্ষিকার হাত ব্যাগ। পাটনায় এক কনভেন্ট স্কুলের শিক্ষিকা বছর ৩৫-এর জয়িতা ঘোষ। ৮ মাসের কোলের বাচ্চা ও ৬০ বছরের বৃদ্ধা মা-কে নিয়ে ফিরছিলেন জয়িতা দেবী। এসি টু-টায়ার কামরায়। নিরাপদেই পুজোর ছুটি কাটাতে আসছিলেন তিনি। তবে রাতের ট্রেন যে নিরাপদ নয় তা আর একবার প্রমাণ পাওয়া গেল। ছোট্ট বাচ্চাকে সামলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন জয়িতা দেবী। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চোর চুরি করে পালায় জয়িতা দেবীর হাত ব্যাগটি। দামী স্মার্ট ফোন, নগদ টাকা, এটিএম কার্ড, প্যান কার্ড, ডেবিট কার্ড—সব নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। রেল পুলিশ, অ্যাটেনডেন্ট থাকা সত্ত্বেও চুরি হয়ে গেল, আর টের পেল না কেউ। ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘুম ভাঙলে ব্যাগের চেন খোলা দেখে আঁতকে ওঠেন জয়িতা দেবীর মা রমা ঘোষ। ব্যাগ খুলে দেখেন খোওয়া গেছে সব দামী জিনিস। প্রথম দিকে রেল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না দিলেও যাত্রীদের চিৎকার, অসন্তোষের কাছে নতিস্বীকার করে। মেনে নেয় গাফিলতি রেল সুরক্ষার। মাস তিনেক আগে এই হাওড়া-পাটনা লাইনে বাথরুমের মধ্যে যাত্রীদের বালিশ-কম্বলের স্টোররুমের খবরটি প্রকাশিত হওয়ায় তদন্ত কমিটি বসে, তবে কম্বলের পরিচ্ছন্নতা ফিরে আসেনি।

প্রধানমন্ত্রী যেখানে বুলেট ট্রেনের প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, সেখানে টু-টিয়ার এসি কামরায় এখনও সিসিটিভি কেন লাগানো থাকে না, সেটা ভেবে দেখার সময় নেই রেল মন্ত্রকের। ভারতীয় রেলের এখনও উন্নতি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্নতায় আরও অনেক কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বুলেট ট্রেন হয়ত কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলে আসবে ভারতে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষায় যে পিছিয়ে রয়েছে তা বারবার প্রমাণিত। পুজোর আগে জয়িতা দেবী যে মানসিক হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেন তার জবাব কে দেবে?

হাওড়া জিআরপির আসানসোল থেকেই চার্জ নেয় বিহার রেলওয়ে পুলিশ থেকে। জয়িতাদেবী রেল কামরায় বসেই অভিযোগ লেখেন এবং জমা দেন হাওড়া জিআরপি-র কাছে। হাওড়া জিআরপি-র মতে, বিহারে ঝাঁঝা-মধুপুর অঞ্চলেই চুরি গেছে। এমনই অবস্থা হয় জয়িতাদেবীর যে ট্যাক্সি করে বাড়ি যাবার মতো টাকা ছিল না। গত দু-বছর ধরে এই লাইনে পাটনা থেকে কলকাতা যাতায়াত করেন তিনি। ট্রেনে চুরির খবর অনেক শুনেছেন, কিন্তু আজ তিনি নিজেই শিকার হলেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*