নিজের পছন্দের লোককে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর পরে সংসদই ভেঙে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল শ্রীসেন । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফের বসেছে সংসদের অধিবেশন। তাতে বেশিরভাগ সাংসদ নতুন প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। এর ফলে রাজাপক্ষে আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। কিন্তু পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের অধিকার থাকছে প্রেসিডেন্টের হাতেই । প্রশ্ন উঠেছে, বেশিরভাগ সাংসদ যদি প্রেসিডেন্টের বিরোধী হন, তাঁরা যে পরের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও ফের অনাস্থা জানাবেন না তার গ্যারান্টি কী?
মহেন্দ্র রাজাপক্ষে ২০০৫ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার প্রসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর আমলে এলটিটিই জঙ্গিদের দমন করা হয়। তখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এছাড়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও ছিল । ২০১৫ সালে রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ মৈত্রীপাল শ্রীসেন শিবির বদল করে জোট বাঁধেন রনিল বিক্রমসিংহের সঙ্গে। রাজাপক্ষে ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন । মৈত্রীপাল হন প্রেসিডেন্ট । বিক্রমসিংহে হন প্রধানমন্ত্রী ।
কিছুদিনের মধ্যে সরকার পরিচালনা নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ ঘনিয়ে ওঠে। মূলত অর্থনৈতিক নানা পলিসি নিয়ে দুজনের মতবিরোধ হচ্ছিল। একটি সূত্রে জানা যায়, মৈত্রীপাল কেবল চিনের নানা কোম্পানিকে সরকারি কাজের অর্ডার দিতে চাইতেন । তার প্রতিবাদ করতেন বিক্রমসিংহে ।
গত ২৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আচমকা বিক্রমসিংহেকে বরখাস্ত করেন । পুরো মন্ত্রিসভাকেই বরখাস্ত করে দেওয়া হয় । তাঁর জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হন রাজাপক্ষে। তড়িঘড়ি শপথও নিয়ে ফেলেন । তখনই নানা মহলে অসন্তোষ ঘনিয়ে ওঠে । গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দেন। নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন, ৫ জানুয়ারি ভোট করাতে হবে নতুন করে ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, সংসদ ভেঙে দেওয়া অবৈধ । নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়, এখনই ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার নেই । বুধবার বসে সংসদের অধিবেশন । ২২৫ জন সাংসদের বেশিরভাগ জানিয়ে দেন, রাজাপক্ষের প্রতি তাঁদের আস্থা নেই ।
সংসদে বিক্রমসিংহের দল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ । কিন্তু রাজাপক্ষে অপসারিত হলেই তিনি যে ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন কথা নেই । পর্যবেক্ষকদের ধারণা, মৈত্রীপাল এখন বুঝতে পারছেন, নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে গিয়ে অনেককে চটিয়ে দিয়েছেন। এমনকী আদালতও তাঁর বিপক্ষে । হয়তো তিনি পুনরায় বিক্রমসিংহের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসতে চাইবেন । সেক্ষেত্রে বিক্রমসিংহে যদি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নাও হন, তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে ওই পদে বসানো হতে পারে । অন্যদিকে চুপ করে বসে থাকবেন না রাজাপক্ষেও। তিনিও নানা কৌশলে ফিরে আসতে চাইবেন ক্ষমতায় ।
Be the first to comment