মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের পর বেহালার মানুষের জীবন এমনিতেই যানজটে অতিষ্ঠ। কিন্তু পর্ণশ্রীর চট্টোপাধ্যায় পরিবারে জটিলতা আরও বেশি। বাড়ির কর্তা পৈতৃক ভিটে ছেড়েছেন বহুদিন আগেই। স্ত্রী’র বিরুদ্ধে রুজু করেছেন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা। কিন্তু স্বামীর ভিটে ছাড়েননি স্ত্রী। এখন সেই গৃহত্যাগী কর্তা পদত্যাগীও বটে। রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্ত থেকে সরে গিয়েছেন আড়ালে। আর ঠিক তখনই বেহালার রাজনীতিতে ক্রমশ সক্রিয় হতে শুরু করেছেন স্ত্রী।
সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মেঘের আড়ালে যাওয়া শুরু করতেই রাজনীতিতে নড়াচড়া বাড়িয়ে দিলেন রত্না। শোভন মন্ত্রিসভা ছেড়েছিলেন মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার দুপুরে দূত পাঠিয়ে ইস্তফা দিয়ে দেন মহানাগরিকের পদ থেকেও। ওই দিন সন্ধ্যায় আলিপুরের উত্তীর্ণ সভা ঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে কলকাতা কর্পোরেশনের তৃণমূল কাউন্সিলররা পরবর্তী মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিমের নামও ঠিক করে ফেলেছেন। শুক্রবার সক্কাল সক্কাল ‘ববিদা’র বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন রত্না। ফুল-মিষ্টি নিয়ে সদ্য প্রাক্তন মেয়রের পত্নী শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন ভাবী মেয়রকে। আর তারপরের দিনই রত্নাকে দেখা গেল অন্য ভূমিকায়। পর্ণশ্রী কলেজে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে উত্তেজনা ছড়ায় শনিবার। খবর পেয়ে সোজা কলেজে চলে যান রত্নাদেবী। টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি।
“রাজনীতিতে তো নতুন নই। সেই কলেজ জীবনে ছাত্র পরিষদ করা দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি।” প্রসঙ্গত, যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী ছিলেন রত্না। এখন তাঁকে কেউ যদি তাঁর কলেজের নাম জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর দেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজে পড়েছি!” ছাত্র পরিষদ করার সময়েই শোভনের সঙ্গে পরিচয় রত্নার। সেই সময় থেকেই সম্পর্ক। রত্না এ দিন বলেন, “রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি। আগে তো শোভনদার পিছনে থেকেই রাজনীতি করতাম। তারপর বিয়ে, সন্তান, সংসার সব মিলিয়ে বেশ কয়েক বছর সক্রিয়ভাবে করতে পারিনি। এখন আবার করছি।” রত্নাদেবীর মা কস্তুরী দাস ছিলেন মহেশতলা বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জিতে এখন সেখানকার বিধায়ক রত্নাদেবীর বাবা দুলাল দাস।
বেহালার তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই আড়ালে-আবডালে বলছেন, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার বৌদিকে চাই। এ প্রসঙ্গে রত্না বলেন, “কত লোক কত কথাই তো বলেন। কে কোথায় প্রার্থী হবেন সবই ঠিক করেন দিদি। এগুলো যাঁরা বলছেন, তাঁরা হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে দিচ্ছেন।” সেই সঙ্গে রত্না এ-ও বলেন, “অনেক দিন ধরে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে। শোভনদা সময় দেন না। মানুষ নানান সমস্যার কথা আমায় জানাচ্ছেন। আমি চেষ্টা করছি সমাধান করার।”
সব শুনে অনেকেই বলছেন, ইঙ্গিত স্পষ্ট। শোভনের ফাঁকা মাঠে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছেন রত্না।
Be the first to comment