চিরন্তন ব্যানার্জি:-
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা সল্টলেকে স্বাস্থ্যভবনে আন্দোলনরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের মঞ্চে এসে পোঁছলেন নির্যাতিতার বাবা, মা, দাদা, কাকিমা। সকলকে কৃতজ্ঞতা জানালেন তাঁরা।
মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্যকর্তার পদত্যাগ সহ ৫ দফা দাবিতে স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দেয় জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যভবনের ১০০ মিটারের আগেই পুলিশি ব্যারিকেড থাকায় সেখানেই রাস্তায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর সেখানেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে পৌছালেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা।
এদিন কৃতজ্ঞতা জানাতে মধ্যরাতে সেখানে পৌঁছে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা বললেন, “একটা মেয়ে হারিয়ে আমি আজ অনেক ছেলে মেয়ে পেয়েছি। সবাই যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, বিচারের দাবিতে লড়ছেন তাতে আশা করছি বিচার আমরা পাবই। প্রশাসনের সুবুদ্ধি হোক।” নির্যাতিতার মা বলেন, “আজ এই মধ্যরাতে আমার ছেলেমেয়েগুলো রাস্তায় বসে রয়েছে। তাই ঘরে থাকতে পারলাম না। চলে এলাম তোমাদের মঞ্চে। আসার সময় দেখলাম, তোমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রুটি খাচ্ছো। প্রশাসন তোমাদের কোথায় নামিয়েছে। ডাক্তারদের মানুষ ভগবান মনে করে। তাঁদেরকে রাস্তায় দিন রাত কাটাতে হচ্ছে। এটা তো খুব লজ্জার।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির নিন্দা করে নির্যাতিতার মা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উৎসবে ফিরতে। আমরা তো পুরো পরিবার সবচেয়ে বড় উৎসবে রয়েছি। মা দুর্গাকে বলব, অবশ্যই আসুক। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করুক। তবে যতক্ষণ না মেয়ের বিচার পাচ্ছি ততক্ষণ দুর্গাপুজোর উৎসবে ফিরব না।”
একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রশাসন কি ভয় পাচ্ছে, তাই কি ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। আমি চাই, ব্যারিকেড তুলুন। এদের সঙ্গে কথা বলুন।” আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের মঞ্চে নির্যাতিতার দাদা বললেন , “সবাই জানতে চায় কী লুকানো হয়েছে? একটা কথা বলে যাচ্ছি, আমরা পরিবারের তরফে আপনাদের পাশে আছি। আমরা চাই প্রশাসন যেন আপনাদের সব দাবি মেনে নেয়, আমার বোনের বিচার যেন পাই। যতদিন না সেটা হচ্ছে ততদিন আমরা চাই এই আন্দোলন চালিয়ে যান।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল অর্থাৎ সোমবার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট। তারপরই একাধিক দাবিতে স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। রাতভর সেই আন্দোলন চলছে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ডিউটি সেরে মধ্যরাতে সেখানে হাজির অনেক সিনিয়র চিকিৎসকরাও। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর্তার ই-মেল বার্তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উল্লেখ্য, যেভাবে নির্যাতিতার বাবা-মা মধ্যরাতে তাঁদের মঞ্চে এসে পৌঁছেছেন তাতে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও মানসিক শক্তি পেলেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
Be the first to comment