১৯৮৪ সালে শিখবিরোধী দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের। তাঁকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু সজ্জন কুমার আদালতের কাছে ৩০ দিন সময় চেয়েছেন। শুক্রবার তাঁর আবেদনের ওপরে শুনানি হবে। বর্ষীয়ান অ্যাডভোকেট এইচ এস ফুলকা দীর্ঘদিন ১৯৮৪ সালের দাঙ্গাপীড়িতদের হয়ে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, সজ্জন কুমারের আবেদনের বিরোধিতা করবেন।
শিখ দাঙ্গায় তাঁকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছিল দিল্লির নিম্ন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই হাইকোর্টে আবেদন করে। সেখানে দাঙ্গাপীড়িতরা অনেকে সাক্ষ্য দেন। তারপরে সজ্জন কুমারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কারাদণ্ড বাদে তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
দণ্ডিত হওয়ার পরদিনই তিনি কংগ্রেসের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পরে তিনি স্থানীয় কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র বিলি করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাদের দিয়েছিলেন মদের বোতল ও টাকা। শিখদের ওপরে হামলা করার জন্য তাদের উস্কানি দিয়েছিলেন।
১ নভেম্বর দিল্লির নানা অঞ্চলে শিখরা আক্রান্ত হন। তখনও সজ্জন কুমারকে অনেকে উত্তেজক ভাষণ দিতে শুনেছেন। তিনি বলছিলেন, যারা আমাদের নেত্রীকে হত্যা করেছে, তাদের এক জনকেও ছাড়া হবে না। তাঁর উস্কানিতে দিল্লির রাজনগর এলাকায় কেহর সিং, গুরপ্রীত সিং, রাঘবেন্দর সিং, নরেন্দ্র পাল সিং এবং কুলদীপ সিং খুন হন। তাঁরা একই পরিবারের সদস্য ছিলেন।
আদালত ২০৩ পাতার রায়ে বলেছে, ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পরে অবিশ্বাস্য রকমের নিষ্ঠুরতা দেখা গিয়েছিল। শুধু দিল্লিতেই খুন হয়েছিলেন ২৭০০ মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। সেই ভয়ংকর ঘটনার প্রভাব আজও টের পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক দলগুলিকে দোষ দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, যারা এই ধরনের গণহত্যায় অংশ নেয়, তারা বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির আশ্রয়ে থাকে। সেজন্য অপরাধীরা কয়েক দশক ধরে শাস্তি এড়িয়ে গিয়েছে।
পুলিশকে সমালোচনা করে কোর্ট বলেছে, ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পরে যা ঘটেছিল, তার তদন্তে পুলিশ চরম ব্যর্থ হয়েছে। যে পাঁচটি খুনের ঘটনায় সজ্জন কুমার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাতে পুলিশ পৃথক এফ আইআর করতেও ব্যর্থ হয়েছিল। মনে হয়, পুলিশ ওই ঘটনায় তদন্ত করতেই চায়নি। যারা ওরকম নৃশংস গণহত্যা ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ ছিল।
Be the first to comment