ভিতরে ভিতরে সলতে পাকানো চলছিলই। এ বার হয়তো সত্যি সত্যি সাংগঠনিক ডানা ছাঁটা যেতে চলেছে মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।
শোভনবাবু তো শুধু মেয়র বা মন্ত্রী নন। একই সঙ্গে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা সভাপতি। প্রশাসনিক পদে টিকে থাকলেও সাংগঠনিক পদ হারাতে চলেছেন কলকাতার এক নম্বর নাগরিক। তৃণমূল সূত্রের খবর, শোভনবাবুর জায়গায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলা সভাপতি হচ্ছেন রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। শুভাশিসবাবুকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “প্রস্তুত হোন।” কয়েক দিনের মধ্যেই দলীয় তরফে ঘোষণা হয়ে যাবে বলেও জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রে। যদিও শুভাশিসবাবু বলেন, “দল এখনও আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।”
দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা তৃণমূলের প্রায় কোনও কাজেই দেখা যায় না শোভনবাবুকে। শাসক দলের অনেকের মতে, এই বদল অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কারণ, সংগঠনের মাথায় থাকা নেতা যদি স্থবির হয়ে যান, কাজ না করেন, তাহলে নিচু স্তরের কর্মীদেরও নিস্ক্রিয়তা গ্রাস করে। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। এমনিতেই সব দল যে যার মতো করে গা গরম করা শুরু করে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২-এ ৪২ করার ডাক দিয়েছেন। সেখানে যদি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জেলার সভাপতিই কাজ না করেন তাহলে সেখানকার ভোটেও তার প্রভাব পড়বে।
দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মে মাসেই। মহেশতলা বিধানসভার উপনির্বাচনে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। জেলায় একটা বিধানসভার ভোট হচ্ছে অথচ জেলা সভাপতিই নাকি নেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, তিনি যে ওই ভোটে মাঠে নামবেন না তা আগেই বুঝেছিল শাসক দলের নেতৃত্ব। কারণ শোভনবাবুর শাশুড়ি কস্তুরী দাসের মৃত্যুর কারণেই ওই কেন্দ্রে উপ ভোট হচ্ছিল। সেই ভোটে আবার প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর তথা প্রয়াত কস্তুরীদেবীর স্বামী দুলাল দাস। আর দুলালবাবুর মেয়ের সঙ্গেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে শোভনবাবুর। ব্যক্তিস্বার্থকে সরিয়ে রেখে তিনি যে দলীয় স্বার্থে ভোটে খাটবেন না তা এক প্রকার নিশ্চিত হয়েই ওই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শুভাশিস চক্রবর্তীকে। অনেকের মতে, ওটাই ছিল শুভাশিসবাবুর অ্যাসিড টেস্ট। আর তাতে কার্যত লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করেছেন তিনি।
কেন?
রাজনৈতিক মহলের মতে, এমনিতেই শোভনবাবুর চালচলন, কাজকর্ম নিয়ে খুশি নন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২২ বছর সংসার করার পর এখন নতুন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ডিভোর্সের মামলাকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল ভাবে নেয়নি বলেই মত তৃণমূলের একাংশের। সেই বৈশাখীদেবীকে গত বৃহস্পতিবার অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। এ বার শোভন।
Be the first to comment