পাঁচতারা হোটেলে ঢোকার পর ঠিক কী হয়েছিল? কেকে’র মৃত্যুর আগের ২৫ মিনিটে নজরদারি পুলিশের

Spread the love

ধর্মতলার অভিজাত পাঁচতারা হোটেলে ঢুকতে না ঢুকতেই ‘ফ্যান’দের ভিড়। প্রিয় ‘কেকে’কে দেখেই এগিয়ে আসেন ‘ফ্যান’রা। হাসিমুখে সেলফি তোলেন গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। কিন্তু তখনও কারও বোঝার উপায় ছিল না যে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন তিনি। কয়েক মিনিট পরই হোটেলের ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে গায়কের।

মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৫ মিনিট থেকে ৯টা ৪০ মিনিট। এই ২৫ মিনিট ওই অভিজাত হোটেলের গেট থেকে ৪২৮ নম্বর রুম পর্যন্ত যা যা হয়েছিল, সেই তথ্যগুলি বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করেন নিউ মার্কেট থানার পুলিশ আধিকারিকরা। যেহেতু হোটেল থেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তাই মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট থানায়  একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ। তারই ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। বুধবার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলিধর শর্মা, ডিসি (সেন্ট্রাল) রূপেশ কুমার ও অন্য আধিকারিকরা হোটেলের ঘরে গিয়ে তদন্ত করেন। রাত সোয়া ন’টা থেকে পৌনে দশটা পর্যন্ত হোটেলের বেশ কিছু সিসিটিভি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও ঘরে পরীক্ষা চালান ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ঘর থেকে রক্তাক্ত একটি তোয়ালে উদ্ধার করা হয়। এদিন হোটেলের কর্মী, ম্যানেজার ও কেকে’র মিউজিশিয়ানদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা কেকে’র ম্যানেজার রীতেশ ভাটের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, রাত পৌনে ন’টার পর নজরুল মঞ্চ থেকে বের হওয়ার পর গাড়িতে শীত করছিল তাঁর। গাড়ির এসি বন্ধ করে দিতে বলেন। তাঁর হাত ও পা শক্ত হয়ে যাচ্ছিল। ম্যানেজারের দাবি, তখন কেকে শুধু হোটেলে ফিরে যেতে চাইছিলেন। আসলে তাঁর কী হয়েছে, তা বোঝাও যায়নি। তাই তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি ম্যানেজার। রাত সোয়া ন’টায় কেকে’র গাড়ি হোটেলের গেট দিয়ে ঢোকে। লবিতে ঢোকার সময়ই তাঁকে ঘিরে ধরেন ফ্যানেরা। তিনি ফ্যানদের সঙ্গে ছবি তোলেন। লবি দিয়ে তিনি লিফটে ওঠেন। লিফটের ভিতর থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, কেকে লিফটের ভিতর একটি রেলিং ধরে রয়েছেন। দু’হাতে রেলিং ধরে মাথা নিচু করে রয়েছেন তিনি। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি অসুস্থ। পাঁচতলায় উঠে লিফট থেকে বেরিয়ে তিনি ঘরের ভিতর ঢুকে যান। সঙ্গে ম্যানেজার রীতেশ ভাট। ফুটেজে কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের ভিতর থেকে রীতেশকে ছুটে আসতে দেখা যায়। ফের ঘরের ভিতর ঢুকে যান তিনি।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ম্যানেজার রীতেশ জানান, রুমের ভিতর ঢোকার মিনিট দু’য়েক পরই কেকে একটি চেয়ারে বসতে যান। কিন্তু বসতে না পেরে পড়ে যান কাঠের মেঝেয়। পড়ে যাওয়ার সময়ই তাঁর কপাল ঠুকে যায় চেয়ারের সামনে থাকা টেবিলে। ফেটে যায় তাঁর কপাল। রক্ত বের হতে শুরু করলে তা একটি তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দেন রীতেশ। তাঁর দাবি, তিনি মেঝে থেকে গায়ককে তুলতে পরছিলেন না। তাই দৌড়ে হোটেলের কোনও কর্মীকে খুঁজতে ঘরের বাইরে আসেন। কিন্তু না পেয়ে ফের রুমে গিয়ে ইন্টারকমে ফোন করে জানান, কেকে অসুস্থ। মেডিক্যাল এমারজেন্সির প্রয়োজন।

হোটেলের ম্যানেজার ও কর্মীরা পুলিশকে জানান, ফোন পেয়েই হোটেলের এক ম্যানেজার ও অন্য পাঁচ কর্মী রুমে যান। হোটেলের ম্যানেজার হোটেলের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসককে ফোন করেন। ওই চিকিৎসক তাঁকে বলেন, সঙ্গে সঙ্গে যেন তাঁকে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি ব্যবস্থা তিনি করছেন। হোটেল ম্যানেজারের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে গেলেও দেরি হয়ে যেত। তাই স্ট্রেচারে করে নিচে নামিয়ে তাঁকে হোটেলেরই গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। রাত দশটা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছনোর পর তাঁকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*