এবার কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ! জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হতে পারে প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে

Spread the love

কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কোন মামলায় এমন নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট?

২০১৪ সাল। কলকাতা পুরসভার মেয়র তখন শোভন চট্টোপাধ্যায়।  সেই সময়ে হেরিটেজ প্রপার্টির তকমা ছিল ৫৯ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ত্রিপুরা হাউস এবং তার লাগোয়া মোট ৯৩.৫ কাঠা জমির। কিন্তু হেরিটেজ আইন ভেঙে ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা হাউসের ওই জমিতে প্রোমোটিংয়ের অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা করে তৎকালীন তৃণমূল বোর্ড৷

সূত্রের খবর, ৫৯ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ওই জমি পুরসভার খাতায় গ্রেড-১ হেরিটেজ সম্পত্তি হিসাবে নথিভুক্ত থাকায় সেখানে যে কোনও নির্মাণই আইনত নিষিদ্ধ ছিল৷ অভিযোগ ওঠে, বেআইনি ভাবেই ওই সম্পত্তি গ্রেড-১ হেরিটেজ তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা নেয় পুরবোর্ড৷ তারা সেটিকে গ্রেড-২ তালিকায় ঢোকানোর পরিকল্পনা করে। এমনকি এর জন্য হেরিটেজ তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে পুর-কর্তৃপক্ষ৷ ওই বছর ১১ অগস্ট পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাবে সিলমোহরও পড়ে যায়৷

পুরসভা সূত্রের জানানো হয়, এক সময় ত্রিপুরা হাউসের মোট জমির পরিমাণ ছিল ১৪৬.৫ কাঠা৷ তার মধ্যে ৫৩ কাঠা জমিতে আগেই আটতলা বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছিল পুরসভা৷ তার পরেও ত্রিপুরা হাউস-সহ মোট ৯৩ কাঠার মতো জমি খালি পড়ে৷ সেই জমিতে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ২০১৩ সালের ২৪ মে পুর-কমিশনার খলিল আহমেদকে চিঠি দেন ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মন৷

চিঠিতে বলা হয়, ওই জমির পশ্চিম অংশে বাড়ি বানাতে চান তিনি৷ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা জমিটি পরিদর্শনে যান৷ কমিটি জানায়, ওই জমিতে কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়৷ সম্পত্তিটিকে গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-২ হেরিটেজ তালিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও খারিজ করে দেয় কমিটি৷ তা সত্ত্বেও মেয়র পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, ত্রিপুরার মহারাজের অনুরোধ মেনে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির কাছে ফেরত পাঠানো হবে৷

সেই সময় প্রশ্ন ওঠে হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি যে প্রস্তাব এক বার খারিজ করে দিয়েছে, তা কিভাবে মেয়র পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পেয়ে গেল? কেনই বা আবার তা হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির কাছে ফেরত পাঠানো হচ্ছে? তা ছাড়া, এর আগে পুরসভা যখন ওই জমির একটা অংশে বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছিল, তখনই ডেভেলপার অঙ্গীকার করেছিল, বাকি জমি তারা অক্ষত রাখবে৷ তার পরেও পুরসভা সেই জমিরই হেরিটেজ চরিত্র বদলের তোড়জোড় করায় প্রশ্ন উঠেছিল।

পুরসভার পিএমইউ (প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিট) বিভাগের ডিজি তথা হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির অন্যতম সদস্য সুব্রত শীলের যুক্তি ছিল, আগের বার জমির মালিককে না জানিয়েই চিঠি দিয়েছিলেন ডেভেলপার৷ সেই সময় হেরিটেজ কমিটি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল৷ জমির মালিক আবার নতুন করে পুরসভায় আবেদন করেন৷  বিষয়টি হেরিটেজ কমিটিতে পেশ করার আগে তাই মেয়র পরিষদের অনুমোদন নিয়ে রাখা হল৷

তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা ছিল, ত্রিপুরা হাউস ভেঙে কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ ফাঁকা জমিতে বাড়ি করার জন্য মালিক একটা আবেদন করেছেন৷ তা বিবেচনার জন্য হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে৷ গ্রেড সংশোধনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*