শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি হল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, দেশে যে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা তৈরি হয়েছে তাতে জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। বুধবার সকাল থেকে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট দেশ পালিয়েছেন, খবর পাওয়া মাত্রই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয়ের মিছিল করে গিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। পুলিস প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও পরে সেনা নামাতে হয়। এরপরই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
শ্রীলঙ্কার ‘পলাতক প্রেসিডেন্ট’ গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে জনআন্দোলনই শুধু নয়, তাঁর পরিবারের ভিতর থেকেও এবার তাঁকে হটানোর দাবি উঠছে। গোতাবায়াকে ফুরিয়ে আসা নেতা বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরই কাছের আত্মীয়রা। গোতাবায়া সরছেন, এ ব্যাপারে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। কিন্তু, কে হতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসূরি? যুগ যুগ ধরে চলা এই পারিবারিক সাম্রাজ্যের হাল কি ফের পরিবারের হাতেই থাকবে! এই প্রশ্ন যখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে, ঠিক তখনই দেশের বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘রাজরক্ত’ থাকা নমল রাজাপক্ষের নাম।
কে এই নমল রাজাপক্ষে?
নমল হলেন গোতাবায়ার ভাইপো। ৩৬ বছর বয়সি নমল শাসকদলের যুবনেতা তথা পার্লামেন্টের সদস্য, মন্ত্রী। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে— বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য হচ্ছে, তিন পুরুষ ধরে চলা এই পরিবারতান্ত্রিক সাম্রাজ্যকে দেশ থেকে উৎখাত করা। নমল ও তাঁর অনুগামীরা ভাবছেন দেশের এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে যদি তাঁদের পরিবারের হাতেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যায়। কিন্তু, কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, বিক্ষোভ-আন্দোলনের পারদ যেভাবে চড়ছে তাতে হয়তো গোটা পরিবারকেই দেশছাড়া হতে হবে। কারণ লড়াইটা চলতি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, কয়েক দশক ধরে চলা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা এক পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এরকম কোনও রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্র নেই, যাদের কয়েক দশকের সাম্রাজ্য চালানোর রেকর্ড আছে। ২০১০-১৫ সালে মাহিন্দা রাজাপক্ষের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর পরিবারের অন্তত ৪০ জন আত্মীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। পরের ভোটে মাহিন্দার পরাজয়ের পর তাঁর অধিকাংশ সরকারি কর্মী ও মন্ত্রী আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হয়।
Be the first to comment