বাম জমানায় স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর চাকরি কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। দলও পাশে নেই। অস্বতি এড়াতে এবার সুজন মাঠে নামালেন শ্যালিকাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের ছবি “সর্বহারা” প্রমাণে মরিয়া সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু সুজনবাবুর শ্যালিকার কৌশলী পোস্ট নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যেখানে একটি অংশে সুজনবাবুর শ্যালিকা অপর্ণা ভট্টাচার্য লিখছেন, “…ক্যাটারার বলার মত আর্থিক অবস্থা মিলির হোলটাইমার বাবা আর প্রাথমিক শিক্ষিকা মায়ের ছিলনা।” অর্থাৎ মিলিদেবীর বাবা (সুজনবাবুর শ্বশুর) শান্তিময় ভট্টাচার্য সিপিএমের হোলটাইমার এবং মিলিদেবীর মা (সুজনবাবুর শ্বাশুড়ি) একজন স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। ফলে হোলটাইমারদের স্ত্রীরা কোনও না কোনও সরকারি চাকরি করতেন। আবার একটি অংশে সুজনবাবুর শ্যালিকা অপর্ণা ভট্টাচার্য লিখছেন, “… অনেক পরে মিলির বর যখন সাংসদ, বাবা জেলা সম্পাদক, মিলি তখন ও ভিড় ঠাসা ক্যানিং লোকালে করে এন্দ্রিউজ কলেজে কেরানিগিরি করতে যেত…! অর্থাৎ সস্তায় “সর্বহারা”র প্রচার করতে গিয়ে অপর্ণাদেবী অবচেতন মনে সিপিএমের পরিবারতন্ত্রের কথা সামনে আনলেন “মিলির স্বামী সংসদ”, “বাবা জেলা সম্পাদক” কথাগুলির মধ্য দিয়ে। সবমিলিয়ে সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলিদেবীর চাকরি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর সিপিএমের পরিবারতন্ত্র ও হোলটাইমারদের পরিবারের সরকারি চাকরির বিষয়টি প্রমাণিত।
দিদি মিলির চাকরি কেলেঙ্কারি ঢাকতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক কী পোস্ট করলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর শ্যালিকা অপর্ণা ভট্টাচার্য। সুজনবাবু ও মিলিদেবীর বিয়ের ছবি পোস্ট করে তিনি লিখছেন, “এটা আমার বড় দিদি মিলির বিয়ের ছবি। ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে যে মিলির হাতে শাঁখা পলা ছাড়া কোনো চুড়ি নেই। গলায় কোনো সোনার হার নেই। সোনালি যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা ওড়নার সস্তার জরির বর্ডার। মিলির বাবার ক্ষমতা ছিল না মেয়েকে সোনা দেওয়ার। মিলি যে শাড়িটা পড়ে আছে সেটা আমার মা, মিলির নতুন কাকিমার দেওয়া। মিলির বিয়ে সব শাড়ি আমার মায়ের কেনা। আমার জ্যেঠুর সামর্থ ছিল না বেনারসি কিনে দেওয়ার। আমার মায়েরও না। মিলি তাই ওর বিয়ের দিন পড়েছিল হলুদ রঙের তাঁত সিল্ক। মিলির ঝলমল হাসিতে দামি শাড়ি গয়নার অভাব ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
মিলির বিয়েতে অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য মাংস ছিল না। কাতলা মাছ আর ফুলকপির তরকারি ছিল। পরিবেশন করেছিল মিলির খুড়তুতো ভাইরা। ক্যাটারার বলার মত আর্থিক অবস্থা মিলির হোলটাইমার বাবা আর প্রাথমিক শিক্ষিকা মায়ের ছিলনা।
পরে, অনেক পরে মিলির বর যখন সাংসদ, বাবা জেলা সম্পাদক, মিলি তখন ও ভিড় ঠাসা ক্যানিং লোকালে করে এন্দ্রিউজ কলেজে কেরানিগিরি করতে যেত। মিলি এর মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য খুঁজে পায়না। কারন ওর কাছে এটাই স্বাভাবিক।
মিলি। আমাদের বড় দিদি। আমাদের বাড়ির সব থেকে সৎ, সব থেকে উদার, সব থেকে সরল, সব থেকে ভালো মেয়ে।”
প্রসঙ্গত, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর চাকরিতে যোগ দেওয়ার একটি চিঠি টুইট করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকও সুজনবাবুর স্ত্রীর চাকরি কেলেঙ্কারির সেই তথ্য তুলে ধরেছিলেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও জানিয়ে দেন, বাম আমলে বহু যোগ্য প্রার্থীকে ‘বঞ্চিত’ করে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, গোটা বিষয়টির মধ্যে যে ‘অস্বচ্ছতা’ ছিল, সে দাবিও করেছেন ব্রাত্য। সুজনের স্ত্রীর চাকরি নিয়ে তদন্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্রাত্য। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করবেন।
Be the first to comment