ময়নাতদন্তের চালান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ, সুপ্রিমকোর্টের একাধিক প্রশ্নের মুখে রাজ্য

Spread the love

 

চিরন্তন ব্যানার্জি:-

সোমবার আরজি কর মামলার শুনানি শুরুতেই সুপ্রিমকোর্টের একাধিক প্রশ্নের মুখে পরতে হল রাজ্যকে। এদিন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যের কাছে জানতে চান, “মৃতদেহ কখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়? তার চালান কোথায়?”

সোমবার আরজি কর মামলার শুনানিতে বড় প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সিবিআইয়ের দেওয়া স্ট্যাটাস রিপোর্ট হাতে নিয়ে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবালকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ময়নাতদন্তের চালান কোথায়? সেটা কি সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে? প্রধান বিচারপতি এও প্রশ্ন করেন, চালান ছাড়া ময়নাতদন্ত করলেন কী করে এর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক? প্রধান বিচারপতি এই প্রশ্ন তুলতেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সিবিআই কিন্তু ময়নাতদন্তের চালান পায়নি। সর্বোচ্চ আদালত প্রশ্ন করা সত্ত্বেও কপিল সিবাল তাঁর ফাইলে ময়নাতদন্তের চালান খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তিনি তা পাননি। তবে সিবাল কথা দেন, পরবর্তী শুনানির দিন এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দেবেন।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় শুনানিতে বলেন, ময়নাতদন্তের চালানের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মৃতের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর আগে একটা চালান লেখে পুলিশ। তাতে লেখা থাকে মৃতের শরীরে কী পোশাক পরা ছিল। আর কিছু ছিল কিনা ইত্যাদি। ডাক্তারবাবু সেই চালান না দেখে ময়নাতদন্ত করতে পারেন না। চালান ও তাতে সিলমোহর দেখে তবেই ময়নাতদন্ত শুরু করা উচিত। আমরা ওই কাগজটাই দেখতে চাইছি। সর্বোচ্চ আদালত এই প্রশ্নও করে যে, চালান ছাড়া ময়নাতদন্ত হলে তা নিয়ে পরে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ ব্যাপারে একটা ফর্ম থাকে। কোন কনস্টেবলের হাত দিয়ে সেই চালানের কপি পাঠানো হচ্ছে, তাতে তাঁর নামও লেখা থাকে। মৃতের পরিবারের কেউ সঙ্গে থাকলে তাঁর নামও সেই চালানে লেখা থাকে। কখন দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হল তাও লেখা থাকে।
চালানের কপি না থাকায় কপিল সিবাল বিড়ম্বনায় পড়ে যান। তিনি পরিষ্কার জানান, তাঁর কাছে চালানের কপি নেই। তাঁকে দেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে তিনি আদালতকে অবশ্যই জানাবেন।
সোমবার শুনানির শুরুতেই আদালতের কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর মূলত দুটি প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রথমেই প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় নম্বর দায়ের করা হয়েছিল কখন? রাজ্য জানায়, ডেথ সার্টিফিকেট দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয় দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে। এরপরই প্রধান বিচারপতির দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, জেনারেল ডায়েরি কখন দায়ের করা হয়? রাজ্য জানায়, দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে। তারপর প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় অপরাধস্থলে তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্তকরণ কখন হয়েছিল, রাজ্য জানায় রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তল্লাশি এবং তল্লাশিতে পাওয়া জিনিস বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলেছিল।
এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্তকে ঢুকতে এবং বেরোতে দেখা গিয়েছে। ফলত, ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ফুটেজ থাকার কথা। ওই সিসিটিভি ফুটেজ রাজ্য সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কি না তাও জানতে চাওয়া হয়, কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান, রাজ্য সিবিআইকে সিসি ক্যামেরার ২৭ মিনিটের ৪টে ক্লিপিংস দিয়েছে।
আদালতে রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয় যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক, আরজি কর হাসপাতালে ৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সহযোগিতা করছে না। অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র অফিসার এবং সিআইএসএফের সিনিয়র অফিসার আলোচনা করে পুরো বন্দোবস্ত করবেন।” প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, সোমবার রাত ৯টার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সিআইএসএফকে দেবে রাজ্য। শীর্ষ আদালতে সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, নিহত চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, তার সময় উল্লেখ করা নেই। রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, সব কিছু উল্লেখ রয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*