‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে!’ কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালত বলে দিয়েছে, জানুয়ারি মাসে হবে নতুন বেঞ্চ গঠন। তারপর সেই বেঞ্চ ঠিক করবে, কবে থেকে শুরু হবে অযোধ্যা মামলার শুনানি। এতে যেন অনেক বিজেপি নেতারই আর তর সইছে না। প্রকাশ্যে বলেও ফেলছেন সে কথা! এই যেমন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং। মন্দির না হওয়ায় আক্ষেপ করতে ছাড়লেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়েও।
শনিবার একটি অনুষ্ঠানের শেষে বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক বলেন, “আমাদের মোদীজির মতো একজন মহান প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। যোগীজির মতো মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। দুজনেই হিন্দুত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু কী কপাল! এই আমলেও রামের ঠিকানা সেই তাঁবুতে।” এই মন্দির না হওয়াকে দেশ এবং হিন্দুদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেন গেরুয়া শিবিরের এই নেতা।
শুধু তো তাই নয়, তিনি মনে করিয়ে দেন, “ভগবানের আবার সংবিধান কী! তিনি সে সবের উর্দ্ধে। তাই অযোধ্যায় দ্রুত রাম মন্দির বানিয়ে ফেলতে হবে। যাতে মন্দির তৈরি হয় তার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।” কয়েকদিন আগে উত্তরপ্রদেশে যোগীর ডেপুটি দীনেশ শর্মা বলেছিলেন, “রাম যবে চাইবেন, মন্দির তবেই হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, অয্যোধ্যার বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করার। একভাগ রামলালা, একভাগ নির্মোহী আখড়া ও একভাগ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে । তার পরেই সুপ্রিম কোর্টে একাধিক সংগঠন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানায়। গত অক্টোবরে দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়ে দিয়েছেন, জানুয়ারির আগে অযোধ্যা শুনানি হবে না। মাঝে অখিলভারত হিন্দু মহাসভা শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার আর্জি জানায় সুপ্রিম কোর্টে। তা-ও খারিজ করে দেয় আদালত। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি চেয়েছিল লোকসভার আগে রাম মন্দির নিয়ে রায় দিক সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু জানুয়ারি থেকে শুনানি শুরু হলে, উনিশের ভোটের আগে রায় বেরনো কার্যত অসম্ভব। হতে পারে, রাম মন্দির ইস্যুকে তাই এ ভাবেই কৌশলে জাগিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি।
পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর রাজ্যেই ধর্ষণের সংখ্যা সবথেকে বেশি। তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আসার পর এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। তারপরেও ধর্ষণের ঘটনায় মেয়েদেরকেই ফের কাঠগড়ায় তুললেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বললেন, নিজের পুরুষ বন্ধুদের ফিরে পাওয়ার জন্যই ধর্ষণের অভিযোগ আনেন মেয়েরা।
শনিবার হরিয়ানায় এক সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন খট্টর। হরিয়ানায় ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” ধর্ষণের ঘটনা আগেও হতো, এখনও হয়। এখন খালি ধর্ষণ নিয়ে মানুষের চিন্তা বেড়ে গেছে।”
কী এই চিন্তা? খট্টরের মতে, সবথেকে বড় চিন্তা হলো এখন মহিলাদের অভিযোগের সংখ্যা। তিনি বলেন, ” ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে দুজন পরিচিত মানুষের মধ্যে। একজন পুরুষ ও মহিলা দিনের পর দিন একসঙ্গে ঘোরে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর একদিন যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়, তখন সেই মহিলা গিয়ে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে।”
খট্টরের এই মন্তব্যের পরেই কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেন। টুইট করে তিনি বলেন “খট্টর সরকারের মহিলা বিরোধী মানসিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। ধর্ষণের ঘটনায় মহিলাদের দায়ী করা হলো আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা।”
এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তিনি টুইট করে বলেন, ” যদি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই এই ধরণের চিন্তাভাবনা করেন তাহলে সেই রাজ্যের মহিলারা কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন? মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণকে সমর্থন করছেন। এই কারণেই হরিয়ানায় ধর্ষণের ঘটনা এত বেশি ঘটছে। কিন্তু ধর্ষকরা খোলা ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
তবে এই প্রথম মনোহরলালা খট্টর এই ধরণের মন্তব্য করলেন তা নয়। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি বলেছিলেন, মহিলারা ছোট জামা-কাপড় পরে বলেই ছেলেরা উত্তেজিত হয়। তিনি বলেছিলেন, ” যদি কোনও মহিলা ভালোভাবে পোশাক পরেন তাহলে তাঁকে ছেলেরা কেন খারাপ ভাবে দেখবে। স্বাধীনভাবে চলা মানে এই নয়, রাস্তায় মেয়েরা উলঙ্গ হয়ে ঘুরবে। স্বাধীনতারও একটা সীমা আছে। এই ধরণের পাশ্চাত্য ও ছোট পোশাক আমাদের সংস্কৃতি নষ্ট করছে। ”
তবে শুধু খট্টরই নন ২০১৪ সালে সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদব বলেছিলেন, ” ধর্ষকদের ফাঁসির সাজা দেওয়া উচিত নয়। কারণ ছেলেরা তো ছেলেই। তাদের থেকেও কখনও কখনও ভুল হয়ে যায়।” এর আগে ২০১২ সালে খাপ পঞ্চায়েতের এক নেতা বলেছিলেন, ” চাওমিন জাতীয় ফাস্টফুড খাওয়ার জন্যই ছেলেদের হরমোনে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তাই ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে।” তবে সব মন্তব্যকে এ দিন ছাপিয়ে গেলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী।
অবশ্য মনোহরলাল খট্টরের এই মন্তব্যের পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়ায় সাফাই গান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ” আমি বলিনি ধর্ষণ দুজনের সম্মতিতে হয়। আমি বলেছি দুজন পরিচিত মানুষের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। এটা আমার কথা নয়, তদন্ত করে এই ঘটনা সামনে এসেছে। এটা একটা সামাজিক ঘটনা। এর মধ্যে রাজনীতির রং লাগানো উচিত নয়। ”
Be the first to comment