ত্রিপুরায় বিজেপিকে হারাতে ইতিমধ্যেই মরিয়া লড়াই শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্যে অসমও যে তৃণমূলের লক্ষ্যেও রয়েছে, তার আভাস মিলেছিল কংগ্রেস ছেড়ে সুস্মিতা দেবের তৃণমূলে যোগদানের পর ৷ অসমে হিমন্তের সরকারের বিরুদ্ধে তিনিই কি হবেন তৃণমূলের মুখ ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে ৷
যদিও উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবাদপ্রতীম কংগ্রেস নেতা প্রয়াত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা মুখে অবশ্য অসম তৃণমূলের মুখ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন ৷ শুধু জানালেন, কোনও শর্ত রেখে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেননি ৷ দল তাঁকে যা দায়িত্ব দেবে, তিনি তা যথাযথভাবে পালন করবেন ৷
তবে অসম কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ৷ বিষয়টি নিয়ে সুস্মিতাকে প্রশ্ন করতে তিনি আগেই স্পষ্ট করলেন যে যাঁরা কংগ্রেস ছেড়েছেন বা ছাড়তে চাইছেন, সকলেই বরাক উপত্যকার নেতা ৷ এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন যে সুস্মিতাও কিন্তু বরাকের নেত্রী ৷ তিনি শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ ৷ তাঁর বাবাও ওই এলাকা থেকেই একাধিকবার সাংসদ হয়েছেন ৷
আর যাঁরা কংগ্রেস ছেড়েছেন, তাঁরা যে তাঁর অনুগামী তাও স্পষ্ট সুস্মিতার কথায় ৷ বুধবার তিনি ইটিভি ভারতকে বললেন, ‘‘বরাক উপত্যকার কংগ্রেসের কিছু কর্মী পদত্যাগ করেছেন ৷ তাঁরা এখনও তৃণমূলে যোগদান করেননি ৷ আমি আগামিকাল অসম যাচ্ছি ৷ তাঁরা পদত্যাগের আগেই আমাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আসতে চাইছিলেন ৷ কিন্তু সেটা কংগ্রেসের জন্য ভাল হবে না বলে আমি তাঁদের জানিয়েছিলাম ৷’’ তাই বোঝাই যাচ্ছে যে সুস্মিতার কাছ থেকে বার্তা পেয়ে ওই নেতারা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের পথে পা বাড়িয়েছেন ৷
সন্তোষমোহন দেবের রাজনৈতিক প্রভাব ত্রিপুরাতেও ছিল ৷ তিনি ত্রিপুরা থেকেও সাংসদ হয়েছিলেন ৷ তাই ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী সুস্মিতা ৷ তাঁর দাবি, বিজেপি শূন্য থেকে ত্রিপুরার ক্ষমতায় এসেছে ৷ কিন্তু ওই রাজ্যের মানুষের জন্য তারা কিছু করেনি ৷ তাই ত্রিপুরার মানুষ এখন বিকল্প হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা করছেন ৷ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পর তা আরও বেড়েছে ৷ আর এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি ওই রাজ্যের বামেদের কোনও ফ্যাক্টর হিসেবেই মনে করছেন না ৷ তাই ত্রিপুরার আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন সুস্মিতা ৷
সুস্মিতাকে সামনে রেখে অসম ও ত্রিপুরায় হয়ত তৃণমূলের রাজনৈতিক লাভ হবে, কিন্তু জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কোনও ক্ষতি হবে না তো ? আপাতত এই প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল ৷ কারণ, সুস্মিতা কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসেছেন ৷ আবার বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে কংগ্রেস ও তৃণমূল ক্রমশ কাছাকাছি আসছে ৷ এই পরিস্থিতিতে সুস্মিতা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এলেন ৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ঘর ভাঙানোর অভিযোগ উঠছে ৷ এখানেই তো জোট প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে ৷
সুস্মিতা অবশ্য তা মনে করেন না ৷ তাঁর সাফ জবাব, ‘‘দেশের মনোভাবের উপর ভিত্তি করেই একটা বৃহত্তর চিত্র তৈরি হচ্ছে ৷ মোদিজির জনপ্রিয়তা নিচের দিকে নামছে ৷ এটাই সবচেয়ে বড় ইস্যু ৷ আমার মনে হয় যে আমার বেরিয়ে আসা তাতে কোনও প্রভাব ফেলবে ৷’’
Be the first to comment