চণ্ডীর বর্ণনা অনুয়ায়ী, দুই অসুর শুম্ভ ও নিশুম্ভর সাধনায় তুষ্ট হয়ে ব্রক্ষ্মা তাঁদের বর দেন কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবে না। এই শক্তি রক্ষিত থাকবে অ-যোনি সম্ভূত অর্থাৎ মাতৃগর্ভে যাঁর জন্ম হয়নি, এমনই এক নারীশক্তির হাতে।
পার্বতীই পূর্বজন্মে সতীরূপে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন দক্ষের যজ্ঞস্থলে। তাই পরের জন্মে তাঁর গায়ের রঙ হয় মেঘের মতো কালো। আর তাতেই তিনি ভোলানাথের আদরের কালিকা। একদিন শুম্ভ নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ট দেবতারা কৈলাশে আশ্রয় নিলে, তাঁদের সামনেই শিব পার্বতীকে বলেন, ‘‘কালিকা, ওদের তুমি উদ্ধার করো।’’ সবার সামনে তাঁর গোপন নাম ধরে ডেকে ফেলায় ক্ষুব্ধ হন দেবী। তপস্যায় বসেন মানস সরোবরে। তপস্যা শেষে মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সমস্ত কালো পরিত্যাগ করে পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্রবর্ণ ধারণ করলেন। যে কালো তিনি পরিত্যাগ করলেন তার থেকেই উৎপত্তি হল কৃষ্ণবর্ণা এক অপূর্ব সুন্দর দেবী কৌশিকীর। আজ সেই তিথি যে দিন দেবীর উৎপত্তি। আর এই তিথিতেই দেবী পার্বতীর শুম্ভ-নিশুম্ভ, দুই অসুর নিধন।
আবার পণ্ডিতরা বলেন, এই তিথিতেই দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারার মর্ত্যে আবির্ভাব। তাই প্রতি ভাদ্রের কৌশিকী অমাবস্যাতেই ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে তারাপীঠে। আপামর ভক্তরা আসেন এই বিশেষ দিনে দেবী দর্শন করে পুণ্য লাভের আশায়। আর সাধক বামাক্ষ্যাপার সিদ্ধির কথা মাথায় রেখে তারাপীঠের শ্মশানে ভিড় জমান তন্ত্রমতে সাধকদের অনেকেই।
এ বছর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ পুজো দিতে এসেছেন বলে দাবি তারামা সেবাইত সংঘের। তাঁরা জানান, পঞ্জিকা অনুসারে আজ রাত্রি ১ টা ৫২ মিনিট থেকে আগামীকাল অর্থাৎ রবিবার রাত্রি ১১:৪০ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা থাকছে। কৌশিকী অমাবস্যার এই বিশেষ তিথিতে তারা মায়ের বিশেষ নিশি পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। মহা ভোগ দিয়ে ও মহা রাজবেশে দেবীকে সাজিয়ে হবে পুজো।
এ বার সপ্তাহ শেষে দুটি ছুটির দিন থাকায় অন্যবারের থেকে বেশি ভিড় হবে বলে মনে করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। মন্দির চত্বরে বসানো হচ্ছে ১৮-২০ টি সিসিটিভি , লাগানো হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর। ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন ক্যামেরাও। পুলিশের পাশাপাশি থাকছে মন্দির কমিটির নিজেস্ব প্রায় ৩০০ জন রক্ষী। হোটেলগুলিতেও নজর রাখছে পুলিশ। মন্দির সংলগ্ন এলাকা ও শ্মশানে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার। শুক্রবারই তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠে গিয়ে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি ধ্রব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বার বেশি ভিড় হবে ভক্তদের। কারণ শনি ও রবিবার অফিস ছুটি। তাই আমাদের তরফে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মায়ের দর্শনের জন্য এ বার সারা রাতই মন্দির খোলা থাকছে I’’
Be the first to comment