হাত ধরেই প্রয়াত হলেন উদার অর্থনীতির জনক

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি, কলকাতা :- ভারতীয় রাজনীতিতে একটা যুগের অবসান। হাত ধরেই প্রয়াত হলেন দেশের উদার অর্থনীতির জনক তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডাক্তার মনমোহন সিং।

১৯৩২ সালে পশ্চিম পাঞ্জাবের গাহ-তে (বর্তমানে পাকিস্তানে) পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মনমোহন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আসেন এপারে। বরাবরই লেখাপড়ায় তুখোর ছিলেন মনমোহন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর শুরু তাঁর আমলা জীবন। প্রথমে রাষ্ট্রসংঘে ভারতের হয়ে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। পরে ৭০য়ের দশকে ভারত সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা (১৯৭২-৭৬), আরবিআইয়ের গভর্নর (১৯৮২-৮৫), পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৮৫-৮৭)।
৯০য়ের দশকের একেবারে শুরু। সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। ভারতও আর্থিক কষ্টে ডুবছে। এই অবস্থায় দেশের হাল ধরতে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব তুলে দেন শিক্ষাবিদ ডঃ মনমোহন সিংয়ের হাতে। তাঁর হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এল উদারীকরণ। বিশ্বের দ্বার খুলে গেল ভারতীয়দের সামনে। বলা যায় এ এক নয়া আর্থিক বিপ্লব। যার জনক ডঃ মনমোহন সিং।
এরপর ভারতীয় রানীতিতে বহু টানাপোড়েন চলেছে। জন্ম নিয়েছে জোট সরকার। এনডিএ সরকারের পতনের পর ১৯৯৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সনিয়া গান্ধী বেছে নেন কংগ্রেসের প্রতি চির আস্থাশীল মনমোহন সিংকে। ২০০৭ সালে তাঁর আমলেই ভারতের জিডিপি সর্বোচ্চে ৯ শতাংশে পৌঁছায়। পৃথিবীর দ্বিতীয় দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসে ভারত। এই সরকার পাঁচ বছর অতিক্রম করে। ফের ২০০৯ সালে ইউপিএ জোট জিতে ক্ষমতায় ফিরলে ডঃ মনমোহনকেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসান সনিয়া। তবে, সমালোচনা হয় মনমোহনের। সনিয়া-রাহুলের ‘কাঠপুতুল’ বলে কটাক্ষে বিদ্ধ হন এই শিক্ষাবদ।
২০১৪ সালে ধরাশায়ী হয় মনমোহন সরকার। কিন্তু রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। শেষে চলতি বছর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হতে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। তবে, শেষদিন পর্যন্ত হাত ছাড়েননি তিনি। সাংসদ হিসাবে শেষ ভাষণে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের নিন্দা করেছিলেন।  ওই পদক্ষেপকে “সংগঠিত লুট এবং বৈধ লুণ্ঠন” বলে তোপ দেগেছিলেন।
পূর্বসূরী সম্পর্কে অবশ্য শেষে সৌজন্যের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখে। মনমোহনের কাজের একাগ্রতা, নিষ্ঠার স্তুতি করেছিলেন মোদি। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকারের বহু অনৈতিক কাজে রুখে দাঁড়াতে না পারায় বারে বারে সমালোচিত হন প্রশাসক মনমোহন। তবে দেশ তাঁকে মনে রাখবে উদার অর্থনীতির।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*