চিরন্তন ব্যানার্জি,কলকাতা:- গত বছর গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে প্রাণহানির পর প্রশাসনিক তৎপরতা, বিধিনিষেধ আরোপ, সমীক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি দেখেছে শহর কলকাতা। কিন্তু সেটা শুধুই যে আইওয়াশ প্রমাণ করেছে নতুন বছরের শুরুতেই কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘাযতীন বিদ্যাসাগর কলোনি। তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। পৌষের শীতে ছাদ হারিয়ে কার্যত খোলা আকাশের নিচে বাস আবাসিকদের। সেই ঘটনায় কাঠগড়ায় প্রমোটার গ্রেফতারও হয়েছেন।
বাঘাযতীন-কাণ্ডে যখন পুরপ্রশাসনের অন্দরে তোরজোর তুঙ্গে, পথে নেমে প্রতিবাদ বিরোধীদের তখনই নির্মীয়মান বাড়ি হেলে পড়ে কামারহাটিতে। খবর দাবানলের মতো চাউর হতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুরকর্তা-সহ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিস। সেই আতঙ্কের রেশ ফুরনোর আগেই ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে হেলে পড়ে বাড়ি। এখানে আবার বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মুখ খুলতেই প্রমোটার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগে সরব স্থানীয়রা। এই ধারাবাহিকতার কোনও শেষ নেই, বলছেন নাগরিক সমাজ। কারণ বাড়ি হেলে পড়ার তালিকায় একদিনে শহর ও শহরতলীতে নয়া সংযোজন বিধাননগর, বাগুইআটি, বেলেঘাটা এবং হাওড়ার শরৎ বোস রোড। প্রতি ক্ষেত্রেই জলাজমি বুজিয়ে বা অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাও কাঠগড়ায়। যদিও কলকাতার মহানাগরিকের গলায় ভিন্ন সুর।
বাড়ি বিপত্তির কারণ খুঁজতে বিরোধী শিবির কাটমানি, সিন্ডিকেট রাজ, প্রশাসনিক উদাসীনতাকে কাঠগড়ায় তুলছে। কারও মুখে আবার সরকারটাই হেলে পড়েছে, কেউ আবার বলছে কাটমানির ভিতে দাঁড়িয়ে বাড়ি। কিন্তু আম আদমি, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়? শ্রমের পুঁজি খুতের মতো জমিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই নিশ্চিত করে জনসাধারণ। ব্যাঙ্ককে গৃহ ঋণ শোধ করতে গিয়ে চলে যায় একটা জীবন। কিন্তু তারপরেও শীতের রাতে পরিবার-সহ ছাদ-হারা, গৃহহারা জনসাধারণ! প্রশাসন দুষছে প্রমোটারকে, পিংপং বলের মতো দায় ঠেলাঠিলের খেলায় বেসামাল নাগরিক নিরাপত্তা। গার্ডেনরিচের মতো আরও প্রাণহানির পরেই কি হুঁশ ফিরবে? উদাসীনতা সরিয়ে তৎপরতা বাড়াবে প্রশাসন?
Be the first to comment