রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- আজ জন্মদিন ছিল মেয়ের। আবদার করেছিল কেকের। কিন্তু নভেম্বরে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ধর্ষণ করে খুন করা হয় মেয়েকে। আর গুড়াপের পাঁচ বছরের সেই শিশুকে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ৫৫ দিনের মাথায় দোষীকে ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া পকসো আদালত। আর তারপরই আদালতের বাইরে কাঁদতে-কাঁদতে প্রায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন মা। তিনি বলেন, ‘আমি ওটাই চেয়েছিলাম, যাতে ফাঁসি হয়। খুবই আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু মেয়ে তো আমার কাছে নেই। আজ মেয়ের জন্মদিন ছিল। ছয় বছর হত। বলেছিল, মা আমার কেক লাগবে। তাকে আমি কেকটা দিতে পারলাম না।’
২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর হুগলির গুড়াপ থানা এলাকার ঘটনা। পাঁচ বছরের শিশুটি মাংস খেতে চেয়েছিল বলে তার বাবা বাজার থেকে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় শিশুটিকে চকোলেট খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় প্রতিবেশী প্রৌঢ় অশোক সিং। এদিকে, মাংস কিনে শিশুটির বাবা বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বেশ কিছুক্ষণ পরেও মেয়েকে খুঁজে নাও পেয়ে তিনি প্রতিবেশীদেরও জানান।
এরপর সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধনিয়াখালি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযুক্তকে মারধর করেন প্রতিবেশীরা। সেই রাতেই পুলিশ অভিযুক্তকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করে। আহত থাকায় তাকে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসে। ফরেনসিক দল এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। জানা যায়, শিশুটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর তাকে খুন করা হয়েছে। দ্রুত এবং সঠিক তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের সিট গঠন করতে নির্দেশ দেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। সিটের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) প্রিয়ব্রত বকসি। সেই ঘটনার ৫২তম দিনে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫৪ দিনের মাথায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল আদালত। বুধবার বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী অভিযুক্ত অশোক সিং-কে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ পকসোর ৬ ধারা এবং বিএনএস-এর ৬৫/২, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। পাশাপাশি শিশুর পরিবারকে স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে আদালত।
Be the first to comment