দু’দিন আগে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কলকাতার কুড়িটি সেতুর ‘লাইফ এক্সপায়ার’ করে গিয়েছে। এ কথার মধ্যেই নিহিত ছিল সতর্কবাণী। তারপর ৪৮ ঘন্টাও কাটল না কলকাতার চারটি সেতুতে পণ্যবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিল পুলিশ। সেই সঙ্গে গোটা রাজ্যে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল কুড়ি চাকার পণ্যবাহী ভারী গাড়ি চলাচল।
এ ব্যাপারে শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তিনি জানান, বিজন সেতু, টালিগঞ্জ সার্কুলার সেতু, উল্টোডাঙার কাছে অরবিন্দ সেতু এবং বেলগাছিয়া ব্রিজে সমস্যা আছে। খুব তাড়াতাড়ি সেখানে মেরামতির কাজ শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী কুড়িটি ব্রিজের লাইফ এক্সপায়ার করার কথা বললেও সে দিন স্পষ্ট করেননি কোন কোন ব্রিজের অবস্থা বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছে সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই এ ব্যাপারে ধন্ধ তৈরি হয়েছিল। এমনিতেই মাঝেরহাট কাণ্ডের পর সেতুতে ওঠার ব্যাপারে ভীতি তৈরি হয়েছে কিছু মানুষের মধ্যে। অনেকের মতে, শনিবার অন্তত সুনির্দিষ্ট ভাবে বোঝা গেল কোন চারটি ব্রিজে সমস্যা রয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতা থেকে ই এম বাইপাস কানেক্টারের জন্য ব্যবহৃত বিজন সেতু শহরের অন্যতম ব্যস্ত ব্রিজ। একই রকমভাবে অরবিন্দ সেতুও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু। যা খান্না থেকে ভিআইপি এবং ইএম বাইপাসকে সংযোগ করে। বেলগাছিয়া ব্রিজও কতকটা মাঝেরহাটের মতো। পাশেই কলকাতা স্টেশন, নীচে রয়েছে রেল লাইন। পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা এ দিন জানিয়েছেন, ছোট পণ্যবাহী গাড়িও উঠতে দেওয়া হবে না এই চারটি সেতুতে।
নবান্নের এক কর্তা শনিবার বলেন, প্রশাসনের রিপোর্টের ভিত্তিতে কুড়িটি সেতুর বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। এই চারটি সেতু ছাড়াও চিংড়িহাটা এবং উত্তর কলকাতার কয়েকটি সেতুরও খারাপ অবস্থা। দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুর ব্রিজের অবস্থাও ভাল নয়। কিন্তু সবকটি সেতুতে এক সঙ্গে মেরামতের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। কারণ, তাতে শহরে প্রবল যানজট তৈরি হবে। তাই দফায় দফায় চারটি-পাঁচটি করে সেতু মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও বক্তব্য, খরচের ব্যাপারটাও চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যকে। এমনিতে কোষাগারের অবস্থা ভাল নয়। মেরামতির জন্য অর্থ সংস্থান করাও চাপের বইকি। তবে যেহেতু মানুষের জীবনের প্রশ্ন, তাই সমস্যা হলেও অর্থ বরাদ্দ করতে কার্পণ্য করা হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Be the first to comment