আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস মতো গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ইয়াস। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, এর পর ক্রমেই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের দিকে এগোতে থাকবে এই ঘূর্ণিঝড়। আজ, সোমবার রাতের মধ্যেই এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বুধবার দুপুরে উত্তর বঙ্গোপসাগরে যার গতিবেগ হতে পারে সর্বোচ্চ ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। দিঘা থেকে বালাসোরের মাঝে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে বুধবার দুপুরের পর।
কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় সোমবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মৃদু হাওয়াও বইছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রাজ্যের সর্বত্রই সোমবার হাল্কা থেকে ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলা-ওড়িশা উপকূলেই অভিমুখ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর। বুধবার এটি আছড়ে পড়তে পারে সাগরদ্বীপ থেকে পারাদ্বীপের মাঝে স্থলভাগে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১৬০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি অনেকটা বেশি বলেই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি এলাকায় হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
২২ মে, শনিবার একটি নিম্নচাপ তৈরি হয় পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে। আন্দামান সাগর সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে রবিবার এটি গভীর থেকে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ক্রমশ এই গভীর নিম্নচাপ আজ, সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। প্রথমে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অভিমুখ থাকলেও পরে অভিমুখ পরিবর্তন হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের যা অভিমুখ, তাতে বাংলা -ওড়িশা উপকূল এলাকাতেই আছড়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। উত্তর বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি বাংলাদেশ থেকে উত্তর ওড়িশা উপকূল পর্যন্ত হবে। সেক্ষেত্রে সুন্দরবনের সাগরদ্বীপ দিয়েও স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সুন্দরবনের বাংলাদেশ উপকূল থেকে ওড়িশা উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।
ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হবে। বাংলাদেশ, বাংলা-ওড়িশা উপকূলের মৎস্যজীবীদের বুধবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের তিন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা।
১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে উত্তর ২৪ পরগনার উপকূল এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনার উপরের অংশে। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়া বইবে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়াতে।
২৫ মে মঙ্গলবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলের তিন জেলা ছাড়াও কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া-তে। কলকাতায় বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ২৬ মে বুধবার প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং কলকাতাতে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়াতে। এদিন বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে।
পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও বৃষ্টি শুরু হবে। উত্তরবঙ্গ, সিকিম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও বুধ ও বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
Be the first to comment