পর্যটন মানচিত্রের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে মুকুটমণিপুর। জ্যোৎস্নার সময় এখানে এসে রাত কাটালে স্বর্গসুখের স্বাদ মেলে। ১০০৯৮ মিটার দীর্ঘ ও ৩৮ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরী হয়েছে কংসাবতী অর্থাৎ কাঁসাই নদীতে। যার ফলে নিয়ন্ত্রনে এসেছে কুমারী ও কংসাবতী নদী। ৮৬ বর্গ কিলোমিটার জলাধার তৈরী হয়েছে কুমারী ও কংসাবতীর সলিলে। নীল জলে ছোট ঢেউ, স্লুইস গেটের ছাড়া জলে সূর্যের আলো পড়ে ঝলমল করে। সত্যি সেই দৃশ্য সমস্ত পর্যটকদের মুগ্ধ করে। তারই মাঝে লেকে ভেসে বেড়ায় নৌকা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুয়েরই প্রশস্তি আছে মুকুটমণিপুরে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ে চলা পথ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে।
মেঠো পথে ৩ কিলোমিটার আর বাঁধ বরাবর ৬ কিলোমিটার যেতে কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমে পরেশনাথ পাহাড়ি টিলায় হিন্দুর দেবতা শিব ও জৈন দেবতা ক্লোরাইট পাথরের পার্শ্বনাথস্বামী। এছাড়াও অসংখ্য মূর্তি রয়েছে। অতীতকালে জৈন সংস্কৃতির পীঠভূমি ছিল মুকুটমণিপুর। এমনকি অতীতকালের জৈন দেবী অম্বিকা হিন্দু দেবী অম্বিকায় রূপান্তরিত হয়েছেন। হিন্দু মতে এই দেবীর পুজোও হয়। ওখান থেকে ফেরি করে নদী পেরিয়ে আরও দেড় কিলোমিটার গিয়ে মহুয়া, পলাশ, আমলকীতে ঘেরা সবুজদ্বীপে বনপুকুরিয়া মৃগদাবাটিও দেখে নেওয়া যায় পায়ে হেঁটে।
ট্যুরিস্ট লজ থেকে গোড়াবাড়ি পেরিয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে অম্বিকানগর, জৈন সংস্কৃতির অতীত পীঠভূমি। অতীতের রাজা অনন্তধবল দেও-এর রাজধানী আজ বিধ্বস্ত। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা জয়রামবাটি থেকে দেবী অম্বিকার পাষাণমূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাক মুসলিম স্থাপত্য শৈলীতে পাথরে গড়া ১১০০ শতকের মন্দির বিলুপ্ত হলেও দেবী অম্বিকা নতুন একটি ছোট মন্দিরে আজও পূজিত হচ্ছেন। মন্দিরটির পিছনে মাকড়া পাথরের জীর্ণ, দীর্ণ শিব মন্দিরটি আর এক অতীত। তবে, দেনার দায়ে রাজা নিমাইচাঁদের কালে হস্তান্তরিত হয় রাজ্যপাট। আরও পরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজা রাইচরণ ধবলদেবের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বদেশি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম, নরেন গোঁসাই ও প্রফুল্ল চাকীদের অস্ত্র কারখানা তথা অনুশীলন কেন্দ্র গড়ে ওঠে ঝিলিমিলি থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে আরণ্যক আখড়া ছেন্দাপাথরে। ১৯০৮ সালে ফাঁস হয়ে যেতে ব্রিটিশদের রোষানলে পড়েন রাজা।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বাসে মুকুটমণিপুর প্রায় ২৪৪ কিলোমিটার পথ। রাত ১০টায় শহীদ মিনার ছেড়ে ভোর সাড়ে ৩টের মধ্যে বাঁকুড়া ও ৪.৩৫ মিনিটে মুকুটমণিপুর পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া প্রাইভেট নানান বাসে বাঁকুড়ায় পৌঁছে বাঁকুড়ার মাচানতলা থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় বাস মেলে মুকুটমণিপুরের। বাস না পেলেও সরাসরি বাঁকুড়া হয়ে চলে যাওয়া যায় মুকুটমণিপুরে। সবচেয়ে ভালো হবে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ৬.২৫ মিনিটের রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে সকাল ১০টায় বাঁকুড়া পৌঁছে বাঁকুড়ার মাচানতলা থেকে বাসে চড়ে মুকুটমণিপুর চলে যাওয়া। এছাড়াও রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে চড়ে দুর্গাপুর পৌঁছেবাসে চড়ে ঘন্টা চারেকে পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে মুকুটমণিপুরে।
কোথায় থাকবেন?
লেকের পাড়ে ত্রিমুখী তিন টিলার রঙে রাত্রিবাসের সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে মুকুটমণিপুরে। রয়েছে কংসাবতী ভবন, ইয়ুথ হোস্টেল। কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযোগস্থলে রয়েছে সোনাঝুড়ি প্রকৃতি ভ্রমন কেন্দ্র, আহারও মেলে এখানে। আর তৈরী হয়েছে হোটেল আম্রপালি। লেকের অপর পাড়ে রয়েছে পিয়ারলেস পিয়ারলেস রিসর্ট, রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ও সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের ট্যুরিস্ট লজও। বাস রাস্তায় তৈরী হয়েছে হোটেল গ্রীন পার্কও।
Be the first to comment