বিজেপির উসকানিতে মহারাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক নাটক চলছে, তা এখন ক্লাইম্যাক্স পর্বে চলে এসেছে। উদ্ধব ঠাকরে বনাম একনাথ শিন্ডে শিবিরের ক্ষমতা প্রদর্শনের বাগযুদ্ধের মধ্যেই এবার মন্ত্রিত্ব দখলের লড়াইয়ে চিড় ধরতে চলেছে বিদ্রোহী শিবিরে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার গঠনের আগেই বিজেপির সঙ্গে মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে ঠান্ডাযুদ্ধের তাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। শুধু বিজেপির সঙ্গেই নয়, শিন্ডে শিবিরেও এই একই পাঞ্জা লড়াই বেধে গিয়েছে। সুতরাং, মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলার খেলায় বিজেপির কয়েক কোটির বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত আদৌ টিকবে কিনা, টিকলেও কদিনের জন্য স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ক্যাবিনেট বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে।
এই পরিস্থিতিতে আপাতত সরকার গঠনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। মঙ্গলবার বিজেপি তাদের সব বিধায়ককে মুম্বইয়ে বৈঠকে ডেকেছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি পরিষদীয় দল রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীকে নিয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইবে। তারা মিলিতভাবে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারিকে জানিয়ে দেবে যে, উদ্ধব নেতৃত্বাধীন সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে শক্তি পরীক্ষা করা হোক।
বিজেপি শিবির মতলব এঁটেছে, প্রথমত, স্পিকারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার। দ্বিতীয়ত, রাজ্যপাল যাতে এখনই বিধানসভায় প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ করেন। শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তি যাতে বিজেপি থেকেই হন, তারও তদ্বির করবে তারা। তৃতীয়ত, রাজ্যপাল যেন উদ্ধব ঠাকরেকে বিধানসভায় সংখ্যাগুরু প্রমাণ করার নির্দেশ দেন। চতুর্থত, উদ্ধব শক্তি প্রমাণে ব্যর্থ হলেই রাজ্যপাল যেন বিজেপিকে নতুন সরকার গঠনে আহ্বান করেন।
এইভাবে বিজেপি এখন সরকার গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার আগেই একনাথ শিন্ডের সঙ্গে মন্ত্রিত্ব প্রাপ্তি নিয়ে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়েছে। শিন্ডের লক্ষ্য নগরোন্নয়ন ও অর্থ দফতর। কিন্তু, বিজেপি এই দুই মালদার দফতর নিজেদের হাতে রাখতে মরিয়া। তা নিয়ে উদ্ধব-বিরোধী শিবিরের সঙ্গে তাদের মন কষাকষি এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ভবিষ্যৎ কোনদিকে গড়াবে, তা সময়ই বলবে।
শুধু বিজেপি-শিন্ডে শিবিরেই নয়, বিদ্রোহী শিবিরের অন্দরেও মন্ত্রিত্ব নিয়ে ফাটল লম্বা হচ্ছে। ২ বিধায়ক তথা মন্ত্রীর মধ্যে ইতিমধ্যেই তা নিয়ে গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেলে ফাটাফাটি ঝগড়া লেগে গিয়েছে। গুলাবরাও পাটিল শিন্ডের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তাঁকে জলগাঁওয়ের সংরক্ষক মন্ত্রী করার। কিন্তু, তাতে প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন আরেক বিধায়ক চিমনরাও পাটিল। তাঁর দাবি, সুরাতে তিনিই প্রথম শিন্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, যেখানে গুলাবরাও অনেক পরে গুয়াহাটি এসে যোগ দিয়েছেন। অতএব, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার অধিকারী তিনিই।
এদিকে, এই ভাঙনের অন্যতম কারিগর বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে গোপনে ফোনে কথা বলেছেন, এই গুজবকে উড়িয়ে দিয়েছে শিবসেনা। সংবাদ মাধ্যম অযথা ভুল প্রচার করেছে বলে তাদের দাবি। উদ্ধবের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ঠাকরের যদি কারও সঙ্গে কথা বলতেই হয়, সকলকে জানিয়েই তা করবেন।
Be the first to comment