আদানির বিরুদ্ধে ফের জালিয়াতির অভিযোগ! ‘JPC’ তদন্তের দাবি রাহুলের

Spread the love

ফের একবার গুরুতর অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র মোদি ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, নিজেদের শেয়ার ঘুরপথে কিনে দাম বাড়াত আদানি গোষ্ঠী। এভাবেই অন্তত ১০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার করেছে আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠরা। আর এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিছু বিদেশীও। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদন তুলে ধরে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুললেন, এভাবে দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করা হচ্ছে, এবং তা দেখেও কেন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি এর আগে সেবির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুল আরও বলেন, এর আগে সেবির তদন্তে যিনি আদানিকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন, তিনি আদানির সংস্থার ডিরেক্টর পদে চাকরি পেয়েছেন। আদানি সংস্থার কারচুপির তদন্ত ‘যৌথ সংসদীয় কমিটি’র আওতায় করার দাবিও জানান রাহুল।

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের পর, আন্তর্জাতিক তদন্তমূলক সংগঠন OCCRP আদানি গোষ্ঠীর লেনদেন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, মরিশাসের একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থা থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এমন একাধিক ভুয়ো সংস্থার শরণাপন্ন হয় আদানি গোষ্ঠী। ওই সমস্ত সংস্থার মাধ্যমে রহস্যজনক ব্যাক্তিরা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন, আবার সময় মতো তা বিক্রিও করে দিতেন। এভাবেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দেখানো হতো। এ ব্যাপারে নাসের আলি শাবান আহিল এবং চাং চুং-লিং নামের দুই ব্যক্তির নাম সামনে আনা হয়েছে। OCCRP-র দাবি, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে আদানিদের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। গৌতম আদানির দাদা, বিনোদ আদানির দীর্ঘ দিনের সহযোগী তাঁরা। আদানি গোষ্ঠীর শাখা সংস্থার ডিরেক্টর এবং শেয়ার হোল্ডারও ছিলেন তাঁরা। ২০১৩ সাল থেকে আদানি গোষ্ঠীতে এঁদের বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

OCCRP জানিয়েছে, আহিল এবং লিং যদি আদানিদের প্রোমোটার হন, সেক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর মোট শেয়ারের ৭৫ শতাংশের বেশি তাদের নিজেদের লোকেদের হাতেই রয়েছে, যা বাজার সংক্রান্ত আইনের পরিপন্থী। আদানি পরিবারের টাকাই ঘুরপথে আহিল এবং লিংয়ের হাত ধরে শেয়ার কেনাবেচায় ঢুকছিল কিনা, তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ না থাকলেও, আদানি পরিবারের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করেই আহিল এবং লিং শেয়ারে টাকা ঢালছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে এবং তার সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করা হয় রিপোর্টে। আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের এই রিপোর্ট তুলে ধরেই বৃহস্পতিবার সরব হন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘনিষ্ঠ আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে রাহুল গান্ধী বলেন, “আদানির সংস্থার মাধ্যমে ভারত থেকে বিদেশে ১০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। শেয়ার বাজারে নিজের সংস্থার মূল্য বেশি দেখিয়ে কারচুপি করেছেন আদানি। সেই টাকায় দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর-সহ অন্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এত কিছুর পরও কেন ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন?” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নিজের সংস্থার শেয়ারে নিজে কেন বিনিয়োগ করেছেন? চিনা নাগরিক এবং দুই বিদেশি দেশের শেয়ার বাজারকে কোন উপায়ে প্রভাবিত করছেন? SEBI-র যে আধিকারিক আদানিকে ক্লিনচিট দিয়েছেন, তিনিই এখন আদানির সংস্থার ডিরেক্টর! নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কী সম্পর্ক গৌতম আদানির? কেন সিবিআই-ইডি আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে না? দেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে যেখানে, কেন আদানিদের বিরুদ্ধে জেপিসি তদন্ত হবে না? এভাবে শেয়ার বাজার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করা হচ্ছে। দেশে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এমন দুর্নীতিগ্রস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী কেন সুরক্ষা দিচ্ছেন? দেশ থেকে ১০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, এই টাকা কার? নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির কী সম্পর্ক? সিবিআই-ইডি আদানির বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করছে না? যৌথ সংসদীয় কমিটি কেন এই বিষয়ের তদন্ত করবে না?”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*