চিরন্তন ব্যানার্জি :- আপতত মিটল রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমকে বয়কট করা নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের ঝামেলা। যদিও বৃহস্পতিবারও প্রথমে মন্ত্রী বক্তব্য রাখতে উঠলে, বিজেপি বিধায়কেরা প্রতীকি ওয়াক আউট করেন। শেষে অধ্যক্ষ নিজে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বলেন, ‘মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম একটা কথা বলতে চান। আপনারা প্লিজ হাউস ত্যাগ না করে ওঁর কথাটা একবার শুনুন।’ তখন বিধানসভায় ফিরাদ বলেন, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে চাননি তিনি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই কারণেই তাঁকে আগেই ‘বয়কট’ করে বিজেপি। বিধানসভার অধিবেশনে ফিরহাদের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন শুভেন্দু অধিকারীরা। দাবি করেন, তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করতে হবে। সেই নিয়েই গত দু’দিন ধরে সমস্যা চলছিল বিধানসভায়। বিধানসভার বাইরে এসে ফিরহাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিরোধীরা স্পষ্ট জানান, যতদিন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, ততদিন ওঁর বিভাগের কোনও প্রশ্নোত্তরে বিধানসভায় যোগ দেবেন না তাঁরা। সেই মতোই চলছিল ওয়াক আউটের পালা। ফিরহাদ যতবার উত্তর দিতে উঠেছেন ঠিক ততবরাই বিধানসভা ওয়াকআউট করে বেরিয়ে গেছেন বিজেপির বিধায়করা। তাঁদের বক্তব্য, ‘বিভাজনকারী’ মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে ফিরহাদকে। বুধবারেও তেমন ‘বয়কট’-এর ছবি দেখা গিয়েছিল বিধানসভার অধিবেশনে। ফিরহাদের বক্তৃতার সময় বিজেপি বিধায়করা অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ফিরহাদকে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন বিজেপি বিধায়কদেরও কক্ষে থাকার অনুরোধ করেন তিনি। তারপর শান্ত হন বিরোধীরা। সে সময়ে ফিরহাদ বলেন, ‘মাননীয় সদস্যরা যখন প্রশ্ন করেন, তখন সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের অনেক তথ্য ঘেঁটে তারপর উত্তর দিতে হয়। তাতে আমার কথার কোনো অপব্যাখ্যা যদি কেউ করেন, তাহলে সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এখানে শঙ্কর বাবু এবং বাকি সবাই আছেন, আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনারা আমাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে মনে করেন কি না?’ ফিরহাদ আরও বলেন, ‘এটা খুব খারাপ লাগে, আপনারা প্রশ্ন করছেন, তারপর আমি উত্তর দিতে উঠলেই আপনারা কক্ষ ত্যাগ করেন। এটা বোধহয় ঠিক নয়। আপনারা ভেবে দেখবেন। একটি ধর্মীয় সভায় গিয়ে কী বললাম, সেটা নিয়ে রাজনীতি করার মানে হয় না।” তখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফিরহাদের যাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু সেখানে তাঁকে ‘মন্ত্রী ও মহানাগরিক’ হিসাবে ডাকা হয়েছিল। শুভেন্দু আরও বলেন, ‘আমরাও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই। আপনি কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনার ধর্মের কথা বলবেন, প্রশংসা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি নিজের ধর্মে বাকিদেরও আহ্বান করবেন, সেটা ঠিক নয়।’’
বিরোধী দলনেতা বক্তব্যের পর ফিরহাদের ব্যাখ্যা, তিনি সেই ধর্মের মানুষ বলেই তাঁকে ডাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় যোগ দিই। এটা নিয়ে তর্ক হওয়া কাম্য নয়। কাউকে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না।”
ফিরহাদ হাকিমের কথার উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আপনি যে কথা বলেছেন সেই কথায় আর কারও মনে কিছু না হলেও, আমাদের হয়েছে। আমি অধ্যক্ষের মাধ্যমে মাননীয় মন্ত্রীর কাছে বলতে চাই, আপনি যদি এখানে অন্তত দুঃখ প্রকাশ করেন তাহলেই হবে। আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না। কিন্তু আপনার ওই মন্তব্যে আমাদের আঘাত লেগেছে, তাই আপনি এই হাউসে শুধু দুঃখ প্রকাশ করলেই হবে।’ এরপর ফিরহাদ বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন, বিশেষ করে বিরোধী দলনেতাও জানেন, আমি নিজে দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে কালীপুজো– সবই অর্গানাইজ করি। উনিও অনেক সময় গিয়েছেন আমার ওখানে। আমি ধর্মনিরপেক্ষ ছিলাম, আছি, থাকব।’ ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যের পরে আর কোনও বিরোধী ওয়াকআউট করেননি।
Be the first to comment