রোজদিন ডেস্ক :- আরও একটি শতাব্দী প্রাচীন ভবন পেলো কলকাতা পুরসভা! ধর্মতলায় এস এন ব্যানার্জি রোডে রয়েছে কলকাতা পুরসভার শতাব্দীপ্রাচীন হেরিটেজ লাল বাড়ি, যা ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রথম পুরভবনের পাশেই নিজস্ব আরও একটি ভবন পেলো পুরসভা।
আজ, শুক্রবার সেই ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়। পুরসভার নয়া এই পাঁচতলা ভবনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চ্যাপলিন ভবন’। পুরসভা সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ‘চ্যাপলিন ভবনের’ বাইরের দিকে কাজ সম্পূর্ণ হলেও ভিতরের কাজ এখনও কিছু বাকি রয়েছে।
এদিন চ্যাপলিন হাউস ভবনের উদ্বোধনের পর মেয়র জানান, এই নতুন ভবনে কলকাতা পৌর সংস্থার বেশ কয়েকটি বিভাগ নিয়ে আসা হচ্ছে। তার মধ্যে সমাজ কল্যাণ বিভাগ, সড়ক এবং বিদ্যুৎ ও আলো বিভাগকে নিয়ে আসা হবে। যাতে কলকাতা পৌর সংস্থার কাজ আরো তরান্বিত করা যায়।
প্রসঙ্গত, চ্যাপলিন স্কোয়ারে যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিল ভারতের প্রথম সিনেমা হল ‘চ্যাপলিন’, সেই জমিতেই মাথা তুলেছে কলকাতা পুরসভার নয়া এই পাঁচতলা ভবন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘চ্যাপলিন ভবন’।
পাশাপাশি দু’টি পুরভবনের মধ্যে স্থাপত্য ও গঠনরীতির সাদৃশ্য যে কারও নজরে পড়বে। সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে নয়া ভবনটি। উপরে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো সবুজ রংয়ের গম্বুজ। বেসমেন্ট সহ গোটা বাড়িটি ছ’তলা। প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট ‘অফিস স্পেস’ রয়েছে। গোটা বিল্ডিং পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। একদম উপরের তলায় থাকবে দু’শো আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম। বেসমেন্টে একসঙ্গে কয়েক’শো গাড়ি রাখা যাবে। তবে পুরসভা সূত্রে খবর, সেখানে পার্কিং লট করা হবে না। অন্য কোনও কাজে লাগানো হতে পারে।
উল্লেখ্য, যেখানে এই নয়া ভবন গড়ে উঠেছে, এক সময় সেখানেই ছিল দেশের প্রথম ‘বায়োস্কোপ’। প্রথম নাম ছিল ‘এনফিনস্টোন পিকচার প্যালেস’। ফার্মজি জামশেদজি ম্যাডান পুরসভা থেকে জমি লিজ নিয়ে ১৯০৭ সালে তৈরি করেন দেশের প্রথম সিনেমা হল। ১৯৩০ সালে ‘স্ট্যান্ড সিনেমা’, ১৯৫১ সালে ‘মিনার্ভা’ নামকরণ হয় এই প্রেক্ষাগৃহের। ১৯৮৯ সালে চার্লি চ্যাপলিনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে হলের নাম হয় ‘চ্যাপলিন’। আর্থিক সমস্যার কারণে ১৯৯৫ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় চ্যাপলিন সিনেমা হল। ২০০৩ সালে তৎকালীন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পুরবোর্ড সেই জমিতে নয়া পুরভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বামফ্রন্ট আমলে ওই প্রকল্প সূর্যের আলো দেখেনি। এর মধ্যে পুরনো পুরভবনে একের পর এক অফিস ও লোকলস্কর বেড়েছে। ফলে পুরসভার নিজস্ব আরও একটি ভবন তৈরির প্রয়োজনীয়তাও বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালে নতুন ভবনের শিলান্যাস করেন তৎকালীন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে কাজ শুরু হতে লেগে যায় ২০১৯-২০ সাল। অবশেষে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ করে এই ভবনের নির্মাণ সংস্কারের কাজ শেষ হয় চব্বিশ সালে।
এক পুরকর্তা বলেন, ‘দেশের প্রথম সিনেমা হল যে এখানেই ছিল, সেই ইতিহাস জানাতে একটি ফলক বসানোর কথা হয়েছে। ১৮৭৬ সালে বর্তমান পুরভবন স্থাপিত হয়। তার আগে চলত মেয়রস কোর্ট। বর্তমানে যে লালবাড়ি আমরা দেখি, তার পুরোটা অবশ্য ১৮৭৬ সালে তৈরি হয়নি। তখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুরসভার অফিস চলত। ১৯০৫ সালে সব অফিসগুলি একছাতার তলায় আনা হয়। তখন পুরভবন বর্তমানের অবয়ব পায়। ফলে চ্যাপলিন স্কোয়ারের এই বাড়িটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পুরসভার নিজস্ব ভবন বললে অত্যুক্তি হয় না।’
Be the first to comment