রোজদিন ডেস্ক :- লোকসভার ছায়া পড়ল বিধানসভা উপনির্বাচনে। কার্যত বাংলায় ‘লালবাতি’ বাম কংগ্রেসের। শূন্য হাতেই ফিরতে হলো বাম এবং কংগ্রেস উভয়কেই। বদল হল না চিত্রের। সর্বত্রই জামানত জব্দ হয়েছে দুই দলের। শুধু তাই নয় শেষ পর্যন্ত ‘নোটা’-র সঙ্গে লড়াই হয়েছে দু’দলের প্রার্থীদের। অনেক সময় দেখা গিয়েছে, নোটার ভোটের থেকে বাম এবং কংগ্রেসের প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান অনেকটাই কম।
পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম – কংগ্রেসের হতাশাজনক পারফরম্যান্স আরও একবার প্রমাণ করল যে রাজ্যের রাজনীতিতে এই দুই দলের অবস্থান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আলাদা আলাদা ভাবে প্রার্থী দেওয়ার পরেও বাম ও কংগ্রেস উভয় দলের প্রার্থীরা জামানত রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের প্রার্থীদের ভোট এতটাই কম পড়েছে যে, কোথাও কোথাও ‘নোটা’র সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে তাদের। নির্বাচনের সময় ‘নোটা’ একটি প্রতিবাদমূলক বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে, গণনা চলাকালীন বিভিন্ন রাউন্ডে ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে পড়ার ঘটনা বাম ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক দৈন্যের নিদর্শন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তরবঙ্গের মাদারিহাটে পরিস্থিতি আরও করুণ। সেখানে বাম শরিক আরএসপি এবং কংগ্রেস উভয়ের প্রার্থী প্রথম চার রাউন্ডেই ‘নোটা’র থেকে কম ভোট পান। আরএসপি প্রার্থী রাউন্ড ধরে ধরে পিছিয়ে ছিলেন, এবং কংগ্রেস প্রার্থীও প্রথম পাঁচ রাউন্ডে প্রায় একই অবস্থায় ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত মাদারিহাটে কংগ্রেস ‘নোটা’র তুলনায় সামান্য এগিয়ে গেলেও, পুরো সময়জুড়ে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ষষ্ঠ রাউন্ড পর্যন্তও কংগ্রেস প্রার্থী ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিলেন। যদিও পরে তারা সামান্য এগিয়ে যায়, কিন্তু এর মাধ্যমে ভোটারদের সমর্থন যে কার্যত অনুপস্থিত, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
মেদিনীপুরে গণনার ষষ্ঠ ও সপ্তম রাউন্ডে ‘নোটা’র চেয়ে পিছিয়ে পড়ে কংগ্রেস। তার আগের রাউন্ডগুলিতে এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান ছিল ৫০-এর কম। পরের রাউন্ডগুলিতেও একপ্রকার ‘নোটা’র সঙ্গেই লড়াই হয়েছে তাদের।
উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় পিছিয়ে না পড়লেও দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ রাউন্ডে কংগ্রসকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল ‘নোটা’। দু’টি রাউন্ডে ব্যবধান ছিল ১০০-রও কম। ত্রয়োদশ রাউন্ডে তো ৫০-এরও কম ব্যবধান ছিল। শেষ পর্যন্ত নোটা থেকে হাজার দেড়েকের কিছু বেশি ভোটে থেমেছে কংগ্রেস।
বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় কংগ্রেসপ্রার্থী দৃশ্যত রাউন্ডের পর রাউন্ড নোটার সঙ্গে লড়েছেন। কখনও ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। কখনও ‘নোটা’কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম রাউন্ড শেষে টানা ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ‘নোটা’ থেকে কয়েকশো ভোট বেশি পেয়ে তালড্যাংরায় এ বারের মতো লড়াই থেমেছে কংগ্রেসের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র মেরুকরণের ফলে বাম এবং কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থান ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
রাজ্যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সাংগঠনিক ভিত্তি প্রায় ভেঙে পড়েছে। তাদের তরুণ সমর্থকেরা হয় তৃণমূল, নয়তো বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। এই নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেস আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, যা ভোট ভাগাভাগির কারণ হয়েছে। বাম এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের অভাব এবং জনসংযোগের ঘাটতি তাদের আরও পিছিয়ে দিয়েছে।
এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের একচেটিয়া জয় এবং বিজেপির ভরাডুবি স্পষ্ট করেছে যে রাজ্যে তৃতীয় কোনও শক্তির জায়গা কার্যত নেই। যেখানে তৃণমূল তাদের উন্নয়নমূলক কাজ দিয়ে ভোটারদের আস্থা বজায় রাখতে পেরেছে, বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে কার্যকর কৌশল গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে বাম-কংগ্রেস পুরোপুরি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।
বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের এই পরাজয় শুধু তাদের রাজনৈতিক দৈন্যকেই নয়, বরং রাজ্যের মেরুকৃত রাজনীতির বাস্তবতাকেও তুলে ধরে। তাদের ভোট ‘নোটা’র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হওয়া এক গভীর সংকেত।
Be the first to comment