ঝড়ের দাপটে মাঝনদীতে উলটে গেল একটি সরকারি লঞ্চ। একেবারে নদীর জলে পড়ে যান লঞ্চের চালক সহ ৩ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে শনিবার রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় তবে পুলিশি তৎপরতায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। বর্তমানে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনজনেই।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুড়িগঙ্গা নদীতে M.V সুচিত্রা নামে লঞ্চটি উলটে যায়। সেটি আদতে পূর্ত দফতরের লঞ্চ। মূলত নজরদারি চালানোর জন্য হারুউড পয়েন্ট কোস্টাল থানা সহ অন্যান্য থানার পুলিশ আধিকারিকেরা লঞ্চটি ব্যবহার করেন। তবে প্রয়োজনে সাধারণ যাত্রী পারাপারও করা হত। শনিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখী শুরু হওয়ায় মুড়িগঙ্গা নদীর ৮ নম্বর লটে লঞ্চটি নোঙর করছিলেন চালক। সেই সময় লঞ্চের ভিতর চালক সহ দুই যাত্রীও ছিলেন। ঝড়ের দাপটে নোঙর খুলে যাত্রী ও চালক সহ লঞ্চটি নদীতে উলটে যায়।
লঞ্চ নদীতে উলটে যাওয়ার পরই আর্ত চিৎকার শুরু করেন চালক ও যাত্রীরা। তাঁদের চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার খবর পৌঁছয় পুলিশের কাছেও। তারপর খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হারুউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার SI ত্রিদ্বীপ সাহা, ASI বিভাস সরকার, ASI রাজদীপ সরকার, কনস্টেবল অনিরুদ্ধ মাইতি, দুজন সিভিক ভলান্টিয়ার শেখ আতিকুর ও বাইদুল্লা। এঁদের সকলের মিলিত চেষ্টায় অবশেষে লঞ্চের চালক সহ তিনজনকে নদী থেক উদ্ধার করা হয়। কম-বেশি প্রত্যেকের চোট লাগলেও কারওর আঘাত গুরুতর নয়।
অন্যদিকে, শনিবারের কালবৈশাখীতে দুই মেদিনীপুর জেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক বালকের। ময়না থানার শ্রীকণ্ঠা অঞ্চলের উত্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা, অমিত সামন্ত নামে ১১ বছরের ওই বালক মায়ের সঙ্গে খেজুরতলায় বাজার করতে গিয়েছিল। হঠাৎ করে কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হলে বৃন্দাবনচক গ্রামের কাছে একটি গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়ে ওই বালকের উপর। একেবারে গাছের ডালের নীচে চাপা পড়ে যায় বালকটি। সঙ্গে সঙ্গে বালকটির মায়ের আর্ত চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন এবং গাছের ডাল কেটে ওই বালককে উদ্ধার করেন। তারপর তাকে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।
অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে বজ্রাঘাতে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নন্দীগ্রামের দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা ইন্দিরা দুয়ারি (৫০), ও মিলাল দুয়ারি (৩০) শনিবার সন্ধ্যায় বাজ পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর তাঁদের রেয়াপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, প্রায় দু-মাস পর পরপর তিনদিনের কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে তীব্র দাবদাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। তবে বৃষ্টির তুলনায় ঝড়ের দাপটই ছিল বেশি। ফলে শনিবারের ঝড়ে একের পর এক জেলায় মৃত্যু থেকে লঞ্চ ডুবির ঘটনার খবর আসছে। বহু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে, বাড়ির চাল উড়ে যায়। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মাঠে তৈরি হওয়া বাঁশের তোড়নও ভেঙে পড়ে শনিবারের ঝড়ের দাপটে। আবার কালবৈশাখীর দাপটে ভেঙে পড়ে বাঁকুড়া পুরসভার লক্ষ্যাতোড়া মহাশ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লির চিমনি। ফলে বন্ধ হয়ে ইলেকট্রিক চুল্লিতে দাহ করার কাজ।
Be the first to comment