রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- কোভিড, এইচএমপিভি-র পর নয়া আতঙ্কের নাম গুলেইন বারি সিনড্রোম ! সম্ভবত এই রোগে আক্রান্ত হয়েই এবার মৃত্যু ঘটেছে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের। এনআরএস হাসপাতালে ইস্যু করা মৃত্যু শংসাপত্রে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সাসপেক্টেড কেস অফ গুলেইন বারি সিনড্রোম’।
তবে, এই মৃত্যুর ঘটনার পরেও অযথা আতঙ্কিত বা চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই দাবি করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তিনি একটি বিবৃতি জারি করেন ৷ সেখানে নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, “গুলেইন বারি সিনড্রোম নতুন কোনও ধরনের বা বিরল রোগ নয় ৷ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দেশে বা রাজ্যে নতুন কিছু নয়।”
তবে, সবাইকে আশ্বস্ত করে স্বাস্থ্য সচিব জানান, “মূলত অ্যাকিউট ফ্ল্যাসিড প্যারালাইসিসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত হন সাধারণত ১৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা। সময়মতো চিকিৎসা না-হলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সর্বদা নজর রাখছে পোলিও বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।” তবে, স্বাস্থ্য সচিবের দাবি অনুযায়ী, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দফতর এনপিএসপি-র তরফে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর মাস শেষের পর রাজ্যে এই রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।”
এদিন স্বাস্থ্য সচিব জানান, রাজ্যে গুলেইন বারি সিনড্রোম আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে ভর্তি রয়েছে দুই শিশু। তারা এই মুহূর্তে ভেন্টিলেশনে রয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। আর তারই মঙ্গলবার মধ্যে এনআরএসে গুলেইন বারি সিনড্রোমে এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে ৷
পরিবার সূত্রে খবর, গত ২২ জানুয়ারি বিকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে গলা ব্যাথার কথা জানিয়েছিল ওই পড়ুয়া। তারপর ২৩ জানুয়ারি সকালে সে বাবা-মাকে জানায়, আগের রাতে জ্বর আসায় ওষুধ খেয়েছিল। কিন্তু, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে হাতে-পায়ে জোর পাচ্ছিল না দ্বাদশ শ্রেণীর ওই পড়ুয়া। একথা শুনে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের সামনেই চেয়ার থেকে পড়ে যায় ওই পড়ুয়া। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিন্তু, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু হলেও, পরে সেখান থেকে কলকাতার নীলরতন সরকার বা এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ওই পড়ুয়াকে। এরপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই শরীরে জোর হারিয়েছে সে। রাতে খাবার খাওয়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়েছিল। গত শুক্রবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, সেদিন দুপুরেই সিসিইউ-তে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু, সব চেষ্টা ব্যার্থ করে সোমবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তার।
মৃত কিশোরের পরিবার অবশ্য এনআরএস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে মৃতর মা জানান সংবাদমাধ্যমকে, “হাসপাতালের তরফে একটা ইনজেকশন দিতে হবে জানিয়েছিল। কিন্তু, সেটা হাসপাতালে ছিল না। তখন আমরা বলি যত টাকা লাগে লাগুক আমরা বাইরে থেকে এনে দেব। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। এরপর মৃত ওই পড়ুয়ার মা আরও জানান, ডায়ালিসিস করতে হবে জানিয়েও, তা করা হয় নি। শেষে প্লাজমা থেরাপি করার পরে জানিয়েছিল ছেলে বিপদমুক্ত। তারপর গতকাল হাসপাতালের তরফে আমাদের জানায় জিবিএসে (গুলেইন বারি সিনড্রোম) আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ছেলের। কিন্তু, কোনও রিপোর্ট হাতে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে হাসপাতাল৷ তাতেই জিবিএসের কথা উল্লেখ আছে।”
প্রসঙ্গত, গুলেইন বারি সিনড্রোম মূলত স্নায়ুর সমস্যা। এই রোগের উপসর্গ হল হাঁটাচলায় সমস্যা, ধীরে ধীরে শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ অকেজো হতে শুরু করবে। সময়ের সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে। শ্বাস-প্রঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। অনেক সময় মুখ বেঁকে যাওয়া ও কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দেয়। পাশাপাশি রক্তচাপের পরিমাণও বেড়ে যায়। বেশ কিছু সময় প্রস্রাবের ক্ষেত্রেও জ্বালা দেখা যায়। তবে, সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ থেকে সেরে ওঠাও সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
Be the first to comment