রোজদিন ডেস্ক : নদীয়ার কৃষ্ণনগর শহরে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে টোটো চলাচল নিয়ে বড়সড় অশান্তি। টোটো চালকদের উপর নতুন নিয়ম চাপানো, বাস মালিক ও টোটো চালকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আর তার পরিণতিতে টোটো বন্ধের ডাক— সব মিলিয়ে গোটা শহর কার্যত অচলাবস্থার মুখে পড়েছে।
কিছুদিন আগেই কৃষ্ণনগর জেলা ট্রাফিক গার্ড একটি নির্দিষ্ট রুট নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ জারি করে। অর্থাৎ কোন রাস্তায় টোটো চলবে, কোন রাস্তায় চলবে না, সেটি ট্রাফিক বিভাগ ঠিক করে দেয়। এই নিয়মে ক্ষুব্ধ টোটো চালকেরা অভিযোগ করেন, এতে তাদের দৈনিক আয়ে বড় ধাক্কা লাগছে।
বুধবার নতুন বাসস্ট্যান্ডে এই ক্ষোভ চরমে ওঠে। টোটো চালকদের সঙ্গে বাস চালক ও কন্ট্রাক্টরদের প্রথমে বাকবিতণ্ডা, তারপর হাতাহাতি শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে বাস মালিক কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
বাস চলাচল বন্ধ হতেই কৃষ্ণনগর শহরে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। দুপুরের পর থেকেই টোটো চালকেরা কৃষ্ণনগর স্টেশন চত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণর গড়িয়া মঠ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের টোটো থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ফলে যাত্রী ও সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন।
সন্ধ্যা বাড়তেই বিক্ষোভ আরও আক্রমণাত্মক রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে টোটো চালকদের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। অবশেষে কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তারা প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় সাময়িকভাবে লাঠিচার্জ করতে হয়।
টোটো চালকদের দাবি, তারা ট্রাফিক আইন মেনে চলতে প্রস্তুত। কিন্তু নতুন রুট নিয়ন্ত্রণের ফলে তাদের অনেকখানি ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিদিনের আয়ও অর্ধেকের বেশি কমে যাচ্ছে। এই অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রতিবাদেই তারা বিক্ষোভে নেমেছেন।
এই অশান্তির জেরে কৃষ্ণনগর স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বাস ও টোটো দুই পরিষেবা বন্ধ থাকায় মানুষকে হাঁটতে হয়েছে বা বিকল্প যানবাহনের জন্য বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ, টোটো চালক ও বাস মালিক সংগঠনকে একসঙ্গে বসতে হবে।
প্রশাসনের নতুন নিয়মে ক্ষুব্ধ টোটো চালকরা বিক্ষোভে নেমেছেন, বাস মালিকদের পাল্টা সিদ্ধান্তে বাস পরিষেবাও বন্ধ, আর এর ধাক্কা পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরেই।

Be the first to comment