সংবাদদাতা, হুগলি: এ বছর আয় খানিকটা কম হোক। কিন্তু কোনভাবেই বাংলার সম্মান খোয়াতে দেওয়া যাবে না। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে চলতি বছর উপরি আয়ের আশা ত্যাগ করলেন আরামবাগের মহিলা ঢাকিরা। বাকি ৩৬০ দিন অধীর অপেক্ষায় থাকেন তারা। বছরের বিশেষ পাঁচটা দিনে উপরি আয়ের আশায় দিন গুনতে থাকেন। কিন্তু এবার ভিন রাজ্যের ডাক ফেরাতে হচ্ছে তাদের। ভিন রাজ্যে ঢাক বাজাতে বাধ সেধেছে বাঙালি বিদ্বেষ।
মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা পুষে রেখে বেশি রোজগারের টানেও কেউ আর অন্য রাজ্যে যেতে চাইছেন না তাঁরা। মন ভার করে তাই এখানেই থেকে যাওয়া। জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের পুনে, নাগপুর, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড এমনকী উত্তরপ্রদেশ থেকেও আমন্ত্রণ আসে তাঁদের কাছে। এ বারে সেই ডাক ফেরাতে হচ্ছে তাঁদের।
আরামবাগের মহিলা ঢাকিদের রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর বিশেষ সেই কার্ড দিয়েছে। তাতে তাঁরা মহালয়ার দিন থেকে ১৪ দিন কাজ করবেন ঢাকের উপরে। তাতেই তাঁদের আয় হবে উপরি।
উল্লেখ্য, আরামবাগ মহকুমায় এই মুহূর্তে মহিলা ঢাকিদের বেশ কয়েকটি দল আছে। সেই সব দলকে নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁদেরই প্রশিক্ষক দিলীপ দাস। তিনিই তাঁদের ‘মাস্টারমশাই’। তাঁর তত্ত্বাবধানে ও প্রশিক্ষণে আজ অনেক মহিলা, গৃহবধূ এই কাজে এসে, সম্মানের সঙ্গে উপার্জন করছেন। সংসারের হাল ধরেছেন। নিজেদের খরচ, সংসার খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেন তাঁরা।
২৪ পরগনায় চারটি, পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুর এলাকায় একটি, বাঁকুড়ার ইন্দাসে একটি, আরামবাগে দু’টি, চুঁচুড়ার দিকে একটি— মোট ন’টি মহিলা ঢাকপার্টি আছে বলে জানান দিলীপ বাবু। তবে এ বারে বাইরে যেতে নারাজ তাঁরাও।এই মহিলা ঢাকিরা বলছেন, বাড়তি রোজগারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সম্মান খোয়াতে পারবেন না তাঁরা।
মাস্টারমশাই দিলীপ বলেন, এঁদের ভিন রাজ্য থেকে ডাক এসেছিল।ভাবলাম, নিয়ে যাব। কিন্তু আতঙ্ক পিছু ছাড়ল না। আমি আশা, ভরসাও পেলাম না। থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওঁরা সেই ভাবে ভরসা দিতে পারেননি। যাওয়াই হলো না ভিন রাজ্যে। এখানেই এঁরা বাজাবেন। এতেই সন্তুষ্ট এই সব মহিলা ঢাকি।

Be the first to comment