রমিত সরকার, কৃষ্ণনগর :
অভাবের প্রকোপে জীবন ও জীবিকা অনেকেই বদল করছেন। শিল্পী হয়ে বেঁচে থাকটা এই সময়ে কঠিন হয়ে পড়ছে অনেকের কাছে। ভাঙা ঘরে ৭৭ বছরের রেবা পালের একমাত্র ভরসা বিধবাভাতা কিংবা কোনো সেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া সহযোগিতা।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বামীর ঘর করতে চলে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। সেই পথ চলা শুরু। স্বামী প্রয়াত হয়েছেন পনেরো বছর আগে। স্বামী ষষ্ঠী পাল কলকাতায় বিভিন্ন ঠাকুরের কাজ করতেন আর অবসর সময়ে এই দুর্গাপট আঁকতেন। তখন দুর্গাপটের চাহিদা ছিলো ভালোই। সিজিনে কলকাতার পাইকারদের যোগান দিতে স্বামী স্ত্রী দুজনাই এই কাজে হাত লাগাতেন। সেই থেকে রেবা পাল এই কাজ করে আসছেন। এই আয় থেকেই তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও এই কাজ করে ও কলকাতায় ঠাকুর গড়ার কাজ করেন। অভাব দৈনিন্দিন, প্রিন্টেড চালচিত্র বাজার নষ্ট করে দিয়েছে, এখন আর সেরকম চাহিদা থাকে না হাতে আঁকা চালচিত্রের, আবার করোনার প্রকোপে এ বাজারে পাইকার পাওয়া দুষ্কর হয় গত বছরে। সরকারী সাহায্য সেভাবে মেলে না। তবু শিল্পীমন কোনোভাবেই বাঁধ মানে না, কাজ করেন নিজের তাগিদে, যদি কেউ কেনে চালচিত্র, তবে কিছুতো উপার্জন হবে, বাঁচবে সংসার।

তিনি বলেন ঘরের কাজ করে, তারপর এই কাজ করি, আঁকতে ভালোই লাগে, না আঁকলে সময় কাটে না, একটা কল্পনার জগতে ডুবে থাকি। সারাবছর দুগ্গা মা আমার ঘরে বিরাজ করেন। তিনি জানান এতে কোনো সিন্থেটিক রঙ ব্যবহার হয় না, প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করে এই চালচিত্র অঙ্কন করা হয়।

তেঁতুলবিচির আঠা, খড়িমাটি, খবরের কাগজের ওপর প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে শিব দুর্গার পরিবার, নন্দী ভৃঙ্গী, সখা সখী, রাধাকৃষ্ণ, অঙ্কন করা। বিভিন্ন গল্পে সাজানো হয় এই পট। কৃষ্ণনগরের, ঘূর্ণী তরুন সংঘের কুমোর পাড়া ঘাট লেনের বাসিন্দা রেবা পালের চালচিত্র ঐতিহ্যের বাহক হিসাবে বেঁচে থাকুক লোকশিল্পের পাতায়।
এশিয়ান পেন্টস শারদ সন্মান ও কৃষ্ণনগর পৌরসভা শিল্পীকে নাগরিক সন্মানে ভূষিত করেছেন।

Be the first to comment